কোথায় বাড়ি, কিছুই জানে না। মনে করিলে অনুশোচনায় আত্মাগ্নানিতে হৃদয় দগ্ধ হইয়া যায়। কেন সে সেদিন যায় নাই, কেন সেই সনির্বন্ধ অনুরোধ উপেক্ষা করিয়াছিল?
সে যথার্থই ভালবাসিয়াছিল। চোখের নেশা নহে, হৃদয়ের গভীর তৃষ্ণা। ইহাতে ছলনা কাপট্যের ছায়ামাত্র ছিল না, যাহা ছিল তাহা সত্যই নিঃস্বার্থ, পবিত্র, বুকজোড়া স্নেহ।
বাবু।
সত্য চমকিয়া চাহিয়া দেখিল, তাহার সেই দাসী যে সঙ্গে আসিত, পথের ধারে দাঁড়াইয়া আছে।
সত্য ব্যস্ত হইয়া কাছে আসিয়া ভারী গলায় কহিল, কি হয়েচে তাঁর? বলিয়াই তাহার চোখে জল আসিয়া পড়িল-সামলাইতে পারিল না।
দাসী মুখ নীচু করিয়া হাসি গোপন করিল, বোধ হয় হাসিয়া ফেলিবার ভয়েই মুখ নীচু করিয়া বলিল, দিদিমণির বড় অসুখ, আপনাকে দেখতে চাইচেন।
চল, বলিয়া সত্য তৎক্ষণাৎ সন্মতি দিয়া চোখ মুছিয়া সঙ্গে চলিল। চলিতে চলিতে প্রশ্ন করিল, কি অসুখ? খুব শক্ত দাঁড়িয়েচে কি?
দাসী কহিল, না, তা, হয়নি, কিন্তু খুব জ্বর।
সত্য মনে মনে হাতজোড় করিয়া কপালে ঠেকাইল, আর প্রশ্ন করিল না। বাড়ির সুমুখে আসিয়া দেখিল খুব বড় বাড়ি, দ্বারের কাছে বসিয়া একজন হিন্দুস্থানী দরোয়ান ঝিমাইতেছে। দাসীকে জিজ্ঞাসা করিল, আমি গেলে তোমার দিদিমণির বাবা রাগ করবেন না ত? তিনি ত আমাকে চেনেন না।
দাসী কহিল, দিদিমণির বাপ নেই, শুধু মা আছেন। দিদিমণির মত তিনিও আপনাকে খুব ভালবাসেন।
সত্য আর কিছু না বলিয়া ভিতরে প্রবেশ করিল।
সিঁড়ি বাহিয়া তেতলার বারান্দায় আসিয়া দেখিল, পাশাপাশি
৫২