বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:নীলগঞ্জের ফালমন সাহেব - বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়.pdf/৮৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

পা খোঁড়া বলে গ্রামের সকলে তাকে হাজারি খুঁড়ি বলে ডাকে। সে এর ওর বাড়ি ঝি-গিরি করে কোনো রকমে দিনপাত করে।

 বদ্যিনাথ কাকা বললে—কি?

 হাজারি বললে—ট্যাকা।

 -কি?

 —ট্যাকা এনেলাম।

 —কিসের টাকা?

 —এই ট্যাকা।

 হাজারি লজ্জায় জড়সড় হয়ে গেল। বদ্যিনাথ কাকা বাবার দিকে চেয়ে বললেন—ও অম্বিক!

 বাবা ছিলেন চণ্ডীমণ্ডপের ওদিকে বসে। কেন না এদিকে ছেলেদের নামতা পড়ার গণ্ডগোল ও বিভিন্ন প্রজা-পত্তনের কচকচি তাঁর বরদাস্ত হোত না। তিনি ওদিকে বসে নিবিষ্টমনে তামাক খেতে খেতে কি সব খাতার পাতা ওল্টাতেন। বদ্যিনাথ কাকা তাঁকে ডাক দিতে তিনি খাতার পাতা থেকে মুখ তুলে বললেন—কি?

 গোপাল গয়লার পরিবার কি বলচে শোনো। আমি তো কিছু বুঝলাম না। টাকার কথা কি বলচে।—যাও, বাবুর কাছে যাও।

 আমরা নতুন কিছু ঘটনার সন্ধান পেয়ে ধারাপাত থেকে মুখ তুলে কান-খাড়া দু’চোখ ঠিকরে সোজা হয়ে বসলাম।

 বাবা বললেন—কি হাজারি, কিসের টাকা বলছিলে?

 —ট্যাকা এনেলাম।

 —কিসের টাকা? তোমরা তো খাজনা কর না। গোপাল গয়লার ভিটের খাজনা মাপ ছিল।

 —এজ্ঞে, সে ট্যাকা নয়—কথা শেষ করেই হাজারি খুঁড়ি একখানা কালোকিষ্টি ময়লা নেকড়ার পুঁটলি খুলে বাবার পায়ের কাছে ঢাললে—একটি রাশ রুপোর টাকা।

৭৭