গণেশদাদার ভাষাতেই বলি, ‘মা সরস্বতীর ঘরের ঝন্কাট কখনো মাড়াইনি যে।’
গণেশদাদা কিন্তু শিখলো অনেক কথা। শ্রুতিস্মৃতির প্রাচীন উপায়ে প্রায় ডজনখানেক ইংরিজি শব্দের ঐশ্বর্যে সে ঐশ্বর্যবান হয়ে উঠলো। আমিও শিষ্যগর্বে গর্বিত হয়ে উঠলাম রীতিমত।
আমার সে-গর্ব মাঝে মাঝে বড় অশোভনভাবে আত্মপ্রকাশ করতো, গণেশদাদার লাজুকতা ও অপ্রতিভ ভাবকে আরও বাড়িয়ে। যেমন একটা উদাহরণ দিই। হরিশ জ্যাঠামশায়ের বাড়ি তাঁর বড় ছেলে ফুটুদা’কে বিয়ের জন্যে কন্যাপক্ষ দেখতে এসেচে—দু’তিনটি ভদ্রলোক, শ্যামনগরের কাছে কোথায় বাড়ি। আমরা ছেলেরা বলাবলি করলাম শ্যামনগর অর্থাৎ শহরের দিকে যতই বাড়ি হোক বাছাধনদের, আমাদের অজপাড়াগাঁ বলে যে নাক সিঁটকোবেন তা হোতে দিচ্চিনে—দেখিয়ে দেবো এ গ্রামের একজন মুচি কৃষাণও ইংরিজি কেমন জানে। সেই ভদ্রলোকের দল যখন হরিশ জ্যাঠামশায়ের চণ্ডীমণ্ডপে বসে আছে, তখন আমি গণেশদাদাকে ডেকে বললাম—এই দেখুন, এদের মাইন্দার কেমন ইংরিজি জানে—
তাদের মধ্যে একজন কৌতূহলের সুরে বললে—তাই নাকি। দেখি—দেখি—
আমি অমনি বলি—গণেশদাদা, ওভার মানে কি?
গণেশ হাত ওপরে তুলে বললে—ওপোর।
—ওয়াটার?
—জল।
—স্কাই?
—আকাশ।
ইত্যাদি।
এক ডজন শব্দের ক্ষীণ পুঁজি শেষ হোতেই আমি থেমে গেলাম। গণেশদাদার দিকে শহরের চালবাজ লোকদের সপ্রশংস দৃষ্টি পড়ুক—
১০৭