ঘরেই সীমাবদ্ধ করিয়া রাখে নাই—নতন সভ্যতা ও কৃন্টির বাণী সে ভারতের প্রদেশ হইতে প্রদেশান্তরে বহন করিয়া লইয়া গিয়াছে। সাহিত্যের মাধ্যমে বাঙালী সমগ্র দেশের সপ্ত মনকে জাগাইয়া তুলিয়া স্বাধীনতার উগ্র আকাঙক্ষায় দেশবাসীকে অস্থির ও উদ্দীপ্ত করিয়া তুলিয়াছিল। সত্বদেশ ও সবজাতির কল্যাণ ও উন্নতিবিধানের জন্য বাঙলার সাহিত্যরথীরাই প্রথম পথের ইঙ্গিত দেন। কবি ঈশ্বর গঞ্জ হইতে আরম্ভ করিয়া আধনিক কাল পর্যন্ত বহ খ্যাত ও অখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক যাত্রাগান, কথকতা, কাব্য, গলপ, উপন্যাস, নাটক ও প্রবন্ধাদির ভিতর দিয়া সমগ্র বাঙালী-চিত্তকে উদ্বদ্ধ করিয়াছেন। রঙ্গলাল, মধ্যসদন, হেমচন্দ্র, নবীনচন্দ্র, বঙিকমচন্দ্র, গিরিশচন্দ্ৰ, রবীন্দ্রনাথ, দ্বিজেন্দ্রলাল, শরৎচন্দ্র প্রমািখ বাণীর বরপত্রেরা কাব্য, উপন্যাস, নাটক ও কাহিনীর মধ্য দিয়া সবদেশের চিত্তভূমিকে তীব্র দেশাত্মবোধের অমাতধারায় যেমন অভিসিঞ্চিত করিয়াছেন, তেমনি প্ৰফল্লচন্দ্র প্রমািখ চিন্তাশীল মনীষিগণ দেশের চিন্তাক্ষেত্ৰকে প্রসারিত করিয়া দিয়াছেন। কাব্য, উপন্যাস ও নাটক ইত্যাদি রসসমন্বিত সাহিত্য সন্টির পাশ্বে জ্ঞান, বিজ্ঞান, দর্শন, ইতিহাস সব কিছই বঙ্গভারতীর অঙ্গন ও প্রাঙ্গণকে সংশোভিত করিয়া তুলিয়াছে। সংস্কৃত ভাষা বা সংস্কৃত নাগ বাঙলা ভাষা পন্ডিতমণ্ডডলীর একচেটিয়া সম্পত্তিরাপে গণ্য হইত। কিন্তু সব্যসাচী বঙ্কিম সেই যে তাহাকে একটি সার্বজনীন রােপ দিয়া সাধারণের সম্মখে তুলিয়া ধরিলেন, তদবধি বাঙলাভাষা অজস্র প্রাণধারায় প্রবাহিত হইয়া সমাজের সকল স্তরের মানষের সম্পত্তিরাপে গড়িয়া উঠিয়াছে। ইহার পর সেই ভাষ ধারণের নিকটে লইয়া আসিলেন প্রমথ চৌধারী। রবীন্দ্রনাথের লেখনীর পণ্যস্পশে এই রচনাপদ্ধতি আরো সরলতা ও বিকাশলাভ করিয়া সাহিত্যে স্থায়ীরাপ পাইয়াছে। নব নব বিষয়বস্তুর প্রাচুযে কবি ও সাহিত্যরথীদের দাক্ষিণ্যে, বৈজ্ঞানিক, ইতিহাসবিদ, প্রত্নতাত্ত্বিক ও দার্শনিকদের অকৃপণ দানের সম্ভার লইয়া বাঙলা-সাহিত্য যে কত শীঘ গতিবেগ লাভ করিয়াছে, তাহার কাহিনী ও ইতিহাস আপনাদের অবিদিত নাই। ইংরাজী সাহিত্যের প্রভাব বাঙলার এই গতিশীলতার ক্ষেত্রে অস্বীকার করা যায় না। (t. C
পাতা:শ্যামাপ্রসাদের কয়েকটি রচনা.pdf/৬৩
অবয়ব