পাতা:পদাবলী-মাধুর্য্য.djvu/৯৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।
৯০
পদাবলী-মাধুর্য্য

আছে। প্রোষিত-ভর্ত্তৃকা একবেণীধরা হইবেন, অভিসারিকা আঁধারে গা ঢাকা দিবার জন্য নীলাম্বরী পরিবেন, নূপুর ত্যাগ করিয়া নিঃশব্দে পথে চলিবেন, ইত্যাদি। কিন্তু চণ্ডীদাস নিজের মনে চলিয়াছেন, তিনি অলঙ্কারশাস্ত্রের প্রতি মোটেই লক্ষ্য করেন নাই। একটি সুবিখ্যাত পদে তিনি কৃষ্ণের অভিসার বর্ণন করিয়াছেন। প্রাচীন পল্লী-গীতিকায়ও আমরা “মহিষাল বঁধুর” অভিসার ও “ধোপার পাটে” রাজকুমারের অভিসারের সঙ্গে পরিচিত হইয়াছি। এই শেষোক্ত প্রণয়ীর অভিসার যে-ভাবে বর্ণিত হইয়াছে, তাহা অনেকটা চণ্ডীদাস-বর্ণিত “এ ঘোর যামিনী মেঘের ঘটা, কেমনে আইলা বাটে” প্রভৃতি পদের অভিসারের মত। চণ্ডীদাসের এই পদটির সমালোচনা-কালে রবীন্দ্রনাথ বহুপূর্ব্বে ইহার গূঢ় অর্থ বিশ্লেষণ করিয়া দেখাইয়াছিলেন। তিনি কতকটা এই ভাবে কবির কবিত্ব ও রচনানৈপুণ্য বুঝাইয়াছিলেন, (সকল কথা আমার মনে নাই ও সেই সমালোচনাটিও এখন সুলভ নহে)। কবি তাঁহার কথার ফাঁকে এমন সকল কথা বলিয়াছেন যে, তদ্দ্বারা বুঝা যায়—রাধার বলিবার উদ্দিষ্ট এক ব্যক্তি নহে। তিনি কখনও কৃষ্ণকে, কখনও সখীকে, কখনও বা নিজেকেই নিজে সম্বোধন করিয়া বলিয়াছেন, অথচ কাহাকে তিনি সম্বোধন করিতেছেন, তাহা স্পষ্ট করিয়া বলেন নাই।

 আমরা তদ্রচিত “কাহারে কহিব মনের মরম, কেবা যাবে পরতীত” পদের আলোচনা-কালে বলিয়াছিলাম, কবির কথায় অনেক ছেদ থাকে, তিনি সমস্ত কথা বলেন নাই; যাহা বলিয়াছেন, তাহা ছাড়া অনেক ইঙ্গিত করিয়াছেন—সমঝ্‌দার পাঠক সেই সকল ফাঁক পূর্ণ করিবেন। এখনকার কাব্যক্ষেত্র অনেক সময়ে বাক্‌পল্লব ও আগাছায় পূর্ণ, সেক্ষপীয়রের “Brevity is the soul of wit” নীতি-পালনের লোক