আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ)/অকৃত্রিম প্রণয়

উইকিসংকলন থেকে

অকৃত্রিম প্রণয়

দুই য়ুরোপীয় ব্যক্তি, দৈবঘটনায় আল্‌জিয়র্স্ প্রদেশে দাসত্ব-শৃঙ্খলে বন্ধ হইয়াছিল। তন্মধ্যে এক ব্যক্তি স্পানিয়ার্ড, তাহার নাম এণ্টোনিয়, অপর ব্যক্তি ফরাসি, তাহার নাম রজর্। তাহারা উভয়ে একস্থানে কর্ম্ম ও একসঙ্গে আহারাদি ও অবস্থিতি করিত। ক্রমে ক্রমে পরস্পর প্রণয় জন্মিলে, নিশ্চিন্তসময়ে একত্র বসিয়া উভয়ে দুঃখের কথা কহিত। এইরূপে পরস্পরের নিকট স্ব স্ব মনোদুঃখের বর্ণন কবিয়া, তাহাদের দাসত্বনিবন্ধন অসহ্য যন্ত্রণার অনেক লাঘব বোধ হইত। যাহা হউক, জন্মভূমি, পিতা, মাতা, স্ত্রী, পুত্র, স্বজন প্রভৃতি বিরহিত ও দূরদেশে দাসত্বশৃঙ্খলে বদ্ধ হইয়া, পশুর ন্যায় পরিশ্রম করা নিরতিশয় কষ্টপ্রদ, সে কষ্ট সহ করিয়া কালযাপন করা সহজ ব্যাপার নহে।

 সমুদ্রের তীরবর্তী এক পর্ব্বতের উপর দিয়া যে পথ প্রস্তুত হইতেছিল, তাহারা উভয়ে একদিন ঐ পথে কর্ম্ম করিতেছে, এমন সময়ে এণ্টোনিয়, সহসা কর্ম্ম হইতে বিরত হইয়া সমুদ্রে দৃষ্টিনিক্ষেপপূর্ব্বক, দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিয়া স্বীয় সহচরকে বলিল, এই অর্ণবের অপর পারে আমার যাবতীয় অভিলষিত পদার্থ আছে, প্রতিক্ষণেই আমার বোধ হয়। যেন আমি এক একবার দেখিতে পাইতেছি, আমার স্ত্রী ও সন্তানেরা সমুদ্রের তীরে আসিয়া, একদৃষ্টিতে এই দিকে চাহিয়া রহিয়াছে, এবং আমার মৃত্যু হইয়াছে ভাবিয়া, অবিশ্রান্ত অশ্রুপাত করিতেছে, আমার ইচ্ছা হয়, সন্তরণ দ্বারা এই জলরাশি অতিক্রম করিয়া, তাহাদের নিকটে যাই। ফলতঃ সেই দিন অবধি এণ্টোনিয় যখন যখন সেই স্থলে কর্ম্ম করিতে যাইত, সমুদ্রে দৃষ্টিপাত করিবামাত্র তাহার অন্তঃকরণে ঐরূপ ভাবের আবির্ভাব হইত।

 একদিন, কর্ম্ম করিতে করিতে এণ্টোনিয় উর্দ্ধশ্বাসে দৌডিয়া গিয়া রজর্‌কে বলিল, সখে, বোধ হয় এতদিনের পর আমাদের দুঃখের অবসান হইল। রজর্ বলিল, কিরূপে? এণ্টোনিয় বলিল, ঐ দেখ, একখান জাহাজ নঙ্গর করিয়া রহিয়াছে, উহা এখান হইতে দুই তিন ক্রোশের অধিক নহে। এস, আমরা এই পর্ব্বতের উপরিভাগ হইতে ঝাঁপ দিয়া সমুদ্রে পড়ি, এবং সাঁতারিয়া গিয়া ঐ জাহাজে উঠি। যদি এই চেষ্টায় কৃতকার্য্য না হইয়া প্রাণত্যাগ করিতে হয়, তাহা, এরূপে দাসত্ব করা অপেক্ষা সহ গুণে শ্রেয়স্কর।

 এই কথা শুনিয়া রজর্ বলিল, যদি তুমি এইরূপে আপনার পরিত্রাণ করিতে পার, আমি তাহাতে আহ্লাদিত আছি। তবে তোমার সহিত আমার যে প্রণয় জন্মিয়াছে, কলেবরে প্রাণসঞ্চার থাকিতে সে প্রণয়ের অপনয়ন হইবে না, সুতরাং তোমার বিরহে আমায় আরও অধিক যন্ত্রণাভোগ করিতে হইবে। যাহা হউক, আমি তোমার নিকট এই প্রার্থনা করিতেছি, যদি তুমি, এই বিপদ হইতে উত্তীর্ণ হইয়া নিরাপদে দেশে যাইতে পার, আমার পিতার অন্বেষণ করিও। তিনি বৃদ্ধ হইয়াছেন, যদি পুত্রশোকে অদ্যাপি জীবিত থাকেন, তাঁহাকে বলিবে—

 এই পর্যন্ত বলিবামাত্র, এণ্টোনিয় তাহার কথা স্থগিত করিয়া বলিল, তুমি কি মনে করিয়াছ, আমি তোমায় এই অবস্থায় রাখিয়া, একাকী এখান হইতে যাইব? তাহা কখনই হইবে না। তোমায় আমায় অভেদশরীর, হয় দুই জনেই নিস্তার পাইব, নয় দুই জনেই প্রাণত্যাগ করিব।

 এণ্টোনিয়ের কথা শুনিয়া রজর্ বলিল, সখে, তুমি যাহা বলিতেছ, যথার্থ বটে, কিন্তু আমি সন্তরণ জানি না, কিরূপে তোমার সঙ্গে দুস্তর সলিলরাশি অতিক্রম করিয়া জাহাজে যাইব। এণ্টোনিয় বলিল, তুমি সে জন্য উদ্বিগ্ন হইও না। তুমি আমার কটিবন্ধ ধরিযা থাকিবে, আমার শরীরে প্রভূত সামর্থ্য ও সন্তরণে বিলক্ষণ নৈপুণ্য আছে, আমি অনায়াসে তোমায় লইয়া জাহাজ পর্য্যন্ত যাইতে পারিব। রজর্ বলিল, এণ্টোনিয়, ও কল্পনায় কোনও ফলোদয় হইবে না, হয় আমি, ভয়ে অভিভূত হইয়া তোমার কটিবন্ধ ছাডিয়া দিব, নয় টানাটানি করিয়া তোমাকেও জলমগ্ন করিব, অতএব ও কথায় আর কাজ নাই। বলিতে কি, তোমার প্রস্তাব শুনিযা, আমার হৃৎকম্প হইতেছে। আমার কথা শুন, আমার ভাগ্যে যাহা আছে, তাহাই ঘটিবে, তুমি আত্মবক্ষার উপায় দেখ। আর বৃথা সময় নষ্ট করিও না, এস, তোমায শেষ আলিঙ্গন করি। এই বলিয়া রজর্, অশ্রুপূর্ণলোচনে এণ্টোনিয়কে আলিঙ্গন করিল। তখন এণ্টোনিয় বলিল, বয়স্য, রোদন করিতেছ কেন? এ অশ্রুবিসর্জ্জনেব সময় নয়। উপায়চিন্তনে বিরত অথবা উপস্থিত উপায়ের অবলম্বনে বিমুখ হইয়া অশ্রুবিসর্জ্জন করা নারীর কর্ম্ম, এরূপ আচরণ করা পুরুষের ধর্ম্ম নহে। অতএব সাহস অবলম্বন কর, আর বাধা দিও না। যদি আর বিলম্ব কর, উভযেই মারা পড়িব, পবে আর এরূপ সুযোগ ঘটিবে না। আমি তোমায় শেষ কথা বলিতেছি, যদি তুমি আমার প্রস্তাবে সম্মত না হও, আমি এই মুহূর্তে তোমার সমক্ষে আত্মঘাতী হইব।

 এণ্টোনিয় এই কথা বলিয়া, স্বীয় প্রিয় বয়স্যের প্রত্যুত্তরের প্রতীক্ষা না করিয়াই, তাহাকে ধাক্কা দিয়া সমুদ্রে ফেলিল, এবং স্বয়ং তাহার অনুবর্ত্তী হইল। রজর্, সমুদ্রে পতিত হইবামাত্র, ভয়ে বিহ্বল হইযা জীবনের আশায় বিসৰ্জ্জন দিয়াছিল। কিন্তু এণ্টোনিয় তাহাকে আশ্বাস ও সাহস প্রদান করিয়া, অনেক কষ্টে স্বীয় কটিবন্ধধারণে সম্মত করিল, এবং পাছে রজর্ কটিবন্ধ ছাড়িয়া দেয়, এই আশঙ্কায় বারংবার তাহার দিকে সোৎকণ্ঠ দৃষ্টিপাত করিতে করিতে, সেই জাহাজকে লক্ষ্য করিয়া, বিলক্ষণ বলপূর্ব্বক সন্তরণ করিয়া চলিল। এই সময়ে এণ্টোনিয় যাদৃশ উৎকণ্ঠাসহকারে রজরের দিকে দৃষ্টিসঞ্চারণ করিতে লাগিল, বোধ করি, জননীও পুত্রের বিপৎকালে তাদৃশ উৎকণ্ঠাপ্রদর্শন করেন না।

 যাহারা জাহাজে ছিল, তাহারা, দুই জনের গিরিশিখর হইতে সমুদ্রে পতন দেখিতে পাইয়াছিল। কিন্তু কি উদ্দেশে উহারা এরূপ অসংসাহসিকের কর্ম্ম করিল, তাহার মর্ম্ম বুঝিতে না পারিয়া, তাহারা নানা বিতর্ক করিতেছে, এমন সময়ে দেখিতে পাইল, একখান নৌকা উহাদের অনুসরণে প্রবৃত্ত হইয়াছে। যাহাদের উপর দাসবর্গের তত্ত্বাবধানের ভার ছিল, তাহারা উহাদের দুই জনকে এইরূপে পলায়ন করিতে দেখিয়া, ধরিবার নিমিত্ত ঐ নৌকা লইয়া আসিতেছিল। রজর্ সর্ব্বাগ্রে ঐ নৌকা দেখিতে পাইল, এবং বুঝিতে পারিল, ইহা নিঃসন্দেহ তাহাদিগকে ধরিবার নিমিত্ত আসিতেছে। আর, সে ইহাও বুঝিতে পারিল, এণ্টোনিয়, বহুক্ষণ বলপূর্ব্বক সন্তরণ করিয়া, ক্রমে ক্লান্ত হইয়া পড়িতেছে। তখন সে সাতিশয় কাতর হইয়া বলিল, বয়স্য এণ্টোনিয়, একখান নৌকা আমাদের অনুসরণ করিতেছে। তুমি একাকী হইলে, ঐ নৌকা আমাদিগকে ধরিবার পূর্ব্বে, অনায়াসে জাহাজে পঁহুছিতে পার, আমি কেবল তোমার গতি প্রতিরোধ করিতেছি। তুমি আমার আশায় বিসর্জ্জন দিয়া, আত্মরক্ষার উপায় দেখ, নতুবা দুই জনেই ধৃত ও পুনরায় তীরে নীত হইব।

 এই বলিযা রজর্, এণ্টোনিয়ের কটিবন্ধ ছাড়িয়া দিল, এবং তৎক্ষণাৎ জলমগ্ন হইল। অকৃত্রিম প্রণয়ের কি অনির্ব্বচনীয় প্রভাব। এণ্টোনিয়, রজরকে কটিবন্ধপবিত্যাগপূর্ব্বক জলমগ্ন হইতে দেখিয়া, তাহাকে তুলিবার নিমিত্ত তৎক্ষণাৎ জলে প্রবিষ্ট হইল। কিয়ৎক্ষণ, উভয়েই অলক্ষিত হইয়া রহিল।

 নৌকার লোকেরা, উহাদিগকে দেখিতে না পাইয়া, কোন দিকে যাইতে হইবে স্থির করিতে না পারিয়া, কিঞ্চিৎ কাল স্থির হইয়া রহিল। জাহাজের লোকেরাও, কৌতূহলাক্রান্তচিত্তে ও অবিচলিতনয়নে, এই অদ্ভুত ব্যাপারের অবলোকন করিতেছিল। তাহারা, দুই জনকে জলমগ্ন হইতে দেখিয়া, উহাদের উদ্দেশের নিমিত্ত একখান বোট খুলিয়া দিল। কিয়ৎক্ষণ চারিদিক নিরীক্ষণ করিয়া বোটের লোকেরা দেখিতে পাইল, এণ্টোনিয়, এক হস্তে রজরকে ধরিয়া আছে, অপর হস্ত দ্বারা বোটের নিকট আসিবার নিমিত্ত প্রাণপণে চেষ্টা করিতেছে। নাবিকেরা তদ্দর্শনে কারুণ্যরসে পরিপূর্ণ হইয়া, যৎপরোনাস্তি বলপূর্ব্বক ক্ষেপণী চালিত করিয়া তাহাদের নিকটে উপস্থিত হইল, এবং তৎক্ষণাৎ উভয়কে বোটে উঠাইয়া লইল।

 এই সময়ে, এণ্টোনিয় এরূপ নিবীর্য্য হইয়া পড়িয়াছিল যে, আর এক মুহূর্ত বিলম্ব হইলে, উভয়ে নিঃসন্দেহ জলমগ্ন হইত। তোমরা আমার বন্ধুর প্রাণরক্ষা কর, এইমাত্র বলিয়া সে অচেতন হইল। বোধ হইতে লাগিল, যেন তাহার প্রাণত্যাগ হইয়াছে। বোটে উঠাইবার সময় রজর্ অচেতন ছিল। সে, কিয়ৎক্ষণ পরে নয়নদ্বয় উন্মীলিত করিল, এবং এণ্টোনিয়কে মৃত্যুলক্ষণাক্রান্ত পতিত দেখিয়া, শোকে একান্ত বিকলচিত্ত হইল, হায়। কি সর্ব্বনাশ ঘটিল। বলিয়া, এণ্টোনিয়ের অচেতন কলেবর আলিঙ্গন করিয়া অশ্রুজলে ভাসাইয়া দিল, এবং নিতান্ত অধীর হইয়া, আকুলবচনে বলিতে লাগিল, বয়স্য, আমিই তোমার প্রাণবধ করিলাম। তুমি যে আমার দাসত্বমোচন ও প্রাণরক্ষার নিমিত্ত এত যত্ন ও এত আয়াস করিতেছিলে, আমা হইতে তাহার এই পুরস্কার পাইলে। আমি অতি নৃশংস ও নরাধম, নতুবা এখন পর্য্যন্ত জীবিত রহিয়াছি কেন। তোমার প্রাণবিয়োগ দেখিয়া কি আমায় প্রাণধারণ করিতে হয়। তোমায় হারাইয়া, আমি প্রাণধারণের কোনও ফল দেখিতেছি না।

 এইরূপ আক্ষেপ করিয়া, সে সহসা দণ্ডায়মান হইল, এবং যদি নাবিকেরা বলপূর্ব্বক নিবারণ না করিত, তাহা হইলে সমুদ্রে ঝাঁপ দিয়া নিঃসন্দেহ প্রাণত্যাগ করিত। নাবিকেরা নিবারণ করাতে, সে যৎপরোনাস্তি বিলাপ ও পরিতাপ করিয়া বলিতে লাগিল, কেন তোমরা আমায় নিবারণ করিতেছ। আমি এরূপ বন্ধুর বিরহে, কখনই প্রাণধারণ করিতে পারি না। আমার জন্যই উহার প্রাণনাশ ঘটিয়াছে। অনন্তর এণ্টোনিয়ের শরীরের উপর পতিত হইয়া সে বলিতে লাগিল, এণ্টোনিয়, আমি অবশ্যই তোমার অনুগামী হইব, কেহই আমায় নিবারণ করিয়া রাখিতে পারিবে না। অহে নাবিকগণ, তোমাদিগকে ঈশ্বরের দোহাই, তোমরা আমায় আর নিবারণ করিও না। আমি কৃতাঞ্জলি হইয়া ভিক্ষা করিতেছি, আমায় প্রাণাধিক বন্ধুর অনুগামী হইতে দাও।

 সৌভাগ্যক্রমে কিয়ৎক্ষণ পরে এণ্টোনিয় এক দীর্ঘনিশ্বাস পরিত্যাগ করিল। তদ্দর্শনে রজর্, আহ্লাদে অধীর হইয়া উচ্চৈঃস্বরে বলিল, আমার বন্ধু জীবিত আছেন, আমার বন্ধু জীবিত আছেন, জগদীশ্বরের কৃপায় এখন উহাব প্রাণত্যাগ হয় নাই। নাবিকেরা তাহার চৈতন্যসম্পাদনের নিমিত্ত যথেষ্ট চেষ্টা করিতে লাগিল। কিয়ৎক্ষণ পরে নয়নদ্বয় উন্মীলিত করিয়া, এণ্টোনিয় স্বীয় প্রিয় বয়স্যের দিকে দৃষ্টিপাতপূর্ব্বক বলিল, রজর্, আমি তোমার প্রাণরক্ষা করিতে পারিয়াছি, এজন্য জগদীশ্বরকে ধন্যবাদ দাও। রজর্, এণ্টোনিয়ের চেতনা-সঞ্চার ও নয়নোন্মীলন দর্শনে এবং অমৃতায়মান বাক্য শ্রবণে, আহ্লাদসাগরে মগ্ন হইল। তদীয় নয়নযুগল হইতে প্রবল বেগে বাষ্পবারি বিগলিত হইতে লাগিল।

 কিয়ৎক্ষণ পরে, সেই বোট জাহাজের নিকটে উপস্থিত হইল। জাহাজস্থিত লোকেরা, নাবিকদিগের মুখে সবিশেষ সমস্ত শ্রবণ করিয়া, কারুণ্যরসে পরিপূর্ণ হইল, এবং তাহাদের প্রতি সাতিশয় স্নেহ ও দয়া প্রদর্শন করিতে লাগিল। ঐ জাহাজ মালাকাপ্রদেশে যাইতেছিল, তথায় উপস্থিত হইয়া, তাহাদের দুই বন্ধুকে সেই স্থানে অবতীর্ণ করিয়া দিল। তাহারা আন্তরিক কৃতজ্ঞতাসহকারে তদীয় দঅয়া ও সৌজন্যের উল্লেখ পূর্বক, প্রভূত সাধুবাদ প্রদান করিয়া, অশ্রুপূর্ণনয়নে তাহাদের নিকট বিদায় লইল। এই ঘটনা দ্বারা দুই বন্ধুর চিরবর্দ্ধিত অকৃত্রিম প্রণয় সহস্র গুণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হইল। অতঃপর উভয়কে পৃথক্ পৃথক্ স্থানে যাইতে হইবে, সুতরাং পরস্পরের বিচ্ছেদ অপরিহার্য্য হইয়া উঠিল। কিরূপে এরূপ বন্ধুর বিচ্ছেদযাতনা সহ্য করিব, এই ভাবনায় উভয়ে নিতান্ত অস্থির হইল। অবশেষে বাষ্পাকুললোচনে গদগদবচনে প্রণয়রসপূর্ণ সম্ভাষণ ও বারংবার গাঢ় আলিঙ্গন করিযা, স্ব স্ব জম্মভূমি, পরিবার ও আত্মীয়বর্গেব উদ্দেশে প্রস্থান করিল।