উৎসর্গ/৩৫
ওরে আমার কর্মহারা , ওরে আমার সৃষ্টিছাড়া ,
ওরে আমার মন রে , আমার মন ।
জানি নে তুই কিসের লাগিকোন্ জগতে আছিস জাগি —
কোন্ সেকালের বিলুপ্ত ভুবন ।
কোন্ পুরানো যুগের বাণী অর্থ যাহার নাহি জানি
তোমার মুখে উঠছে আজি ফুটে ।
অনন্ত তোর প্রাচীন স্মৃতি কোন্ ভাষাতে গাঁথছে গীতি ,
শুনে চক্ষে অশ্রুধারা ছুটে ।
আজি সকল আকাশ জুড়ে যাচ্ছে তোমার পাখা উড়ে ,
তোমার সাথে চলতে আমি নারি ।
তুমি যাদের চিনি বলে টানছ বুকে , নিচ্ছ কোলে ,
আমি তাদের চিনতে নাহি পারি ।
আজকে নবীন চৈত্রমাসে পুরাতনের বাতাস আসে ,
খুলে গেছে যুগান্তরের সেতু ।
মিথ্যা আজি কাজের কথা , আজ জেগেছে যে - সব ব্যথা
এই জীবনে নাইকো তাহার হেতু ।
গভীর চিত্তে গোপন শালা সেথা ঘুমায় যে রাজবালা
জানি নে সে কোন্ জনমের পাওয়া ।
দেখে নিলেম ক্ষণেক তারে , যেমনি আজি মনের দ্বারে
যবনিকা উড়িয়ে দিল হাওয়া ।
ফুলের গন্ধ চুপে চুপে আজি সোনার কাঠি - রূপে
ভাঙালো তার চিরযুগের ঘুম ।
দেখছে লয়ে মুকুর করে আঁকা তাহার ললাট - ' পরে
কোন্ জনমের চন্দনকুঙ্কুম ।
আজকে হৃদয় যাহা কহে মিথ্যা নহে , সত্য নহে ,
কেবল তাহা অরূপ অপরূপ ।
খুলে গেছে কেমন করে আজি অসম্ভবের ঘরে
মর্চে - পড়া পুরানো কুলুপ ।
সেথায় মায়াদ্বীপের মাঝে নিমন্ত্রণের বীণা বাজে ,
ফেনিয়ে ওঠে নীল সাগরের ঢেউ ,
মর্মরিত - তমাল - ছায়ে ভিজে চিকুর শুকায় বায়ে —
তাদের চেনে , চেনে না বা কেউ ।
শৈলতলে চরায় ধেনু , রাখালশিশু বাজায় বেণু ,
চূড়ায় তারা সোনার মালা পরে ।
সোনার তুলি দিয়ে লিখা চৈত্রমাসের মরীচিকা
কাঁদায় হিয়া অপূর্বধন - তরে ।
গাছের পাতা যেমন কাঁপে দখিনবায়ে মধুর তাপে
তেমনি মম কাঁপছে সারা প্রাণ ।
কাঁপছে দেহে কাঁপছে মনে হাওয়ার সাথে আলোর সনে ,
মর্মরিয়া উঠছে কলতান ।
কোন্ অতিথি এসেছে গো , কারেও আমি চিনি নে গো
মোর দ্বারে কে করছে আনাগোনা ।
ছায়ায় আজি তরুর মূলে ঘাসের'পরে নদীর কূলে
ওগো তোরা শোনা আমায় শোনা —
দূর - আকাশের - ঘুম - পাড়ানি মৌমাছিদের - মন - হারানি
জুঁই - ফোটানো ঘাস - দোলানো গান ,
জলের - গায়ে - পুলক - দেওয়া ফুলের - গন্ধ - কুড়িয়ে - নেওয়া
চোখের পাতে - ঘুম - বোলানো তান ।
শুনাস নে গো ক্লান্ত বুকের বেদনা যত সুখের দুখের —
প্রেমের কথা — আশার নিরাশার ।
শুনাও শুধু মৃদুমন্দ অর্থবিহীন কথার ছন্দ ,
শুধু সুরের আকুল ঝংকার ।
ধারাযন্ত্রে সিনান করি যত্নে তুমি এসো পরি
চাঁপাবরন লঘু বসনখানি ।
ভালে আঁকো ফুলের রেখা চন্দনেরই পত্রলেখা ,
কোলের'পরে সেতার লহো টানি ।
দূর দিগন্তে মাঠের পারে সুনীল - ছায়া গাছের সারে
নয়নদুটি মগ্ন করি চাও ।
ভিন্নদেশী কবির গাঁথা অজানা কোন্ ভাষার গাথা
গুঞ্জরিয়া গুঞ্জরিয়া গাও ।