চিত্ত-মুকুর/আমিত উন্মাদ নই, উন্মাদ জগৎ

উইকিসংকলন থেকে

আমিত উন্মাদ নই, উন্মাদ জগৎ।

দেখ না ভুলিয়া আঁখি জগতের পানে,
কোথা মাদকতা নাই, কে নহে পাগল।
গগণে ভূতলে জলে লতায় পাতায় ফলে,
তোমার মতন কার হৃদয় অচল?
হৃদয় বিহীন হেন, জীব জন্তু আছে কোন?
পাষাণ হৃদয় শৈল তাহাও বিহ্বল,
উচ্চ শিরে চুম্বিতেছে নীল নভস্তল।


কে নহে উম্মাদ দেখ সম্মুখে তোমার?
চঞ্চল হৃদয়া ওই ভীম পারাবার,
তরঙ্গে তরঙ্গে, কত, আলিঙ্গন অবিরত,
কত প্রেম কত সুখ তরঙ্গে উহার।



কি সুখে উন্মাদ সিন্ধু তুমি বুঝিবেনা কিন্তু,
তরঙ্গে তরঙ্গে ওই চিত্ত বিনিময়,
বুঝিবে না ওই প্রেম কত সুধাময়।


বুঝিবে না তুমি কেন বিকচ কমল,
সরসী হৃদয়ে ভাসি করে টল মল।
পরশি লিল্লোল কেন, উল্লাশে লুটায় হেন,
বুঝিবে না কেন এত হইয়া চঞ্চল,
উলটি পালটি চুম্বে সরসীর জল।
নিরব সরসী জল নিরব জড় কমল,
পরশনে তবু মত্ত হৃদয় যুগল!


কেন গগনের বক্ষে ওই সৌদামিনী,
নাচে ঘন ঘটা করি যেন উন্মাদিনী।
নিলীম মেঘের গায়, কি সুখে মিশায়ে রয়,
বিকাশে মধুর হাঁসি বিশ্ব-বিমোহিনী।
দামিনী চাপিয়া বুকে মেঘ মন্ত্রে কত সুখে,
বুঝিবে না এক অঙ্গে হলে পরিণত,
প্রেমিকের দুই চিত্তে উঠে সুখ কত।


সেও প্রেম এত প্রেম গভীর উভয়,
মাদকতা-শূন্য প্রেম গভীর কোথায়?
অন্তরে যে স্রোত বহে, ঢাকিলে কি চাপা রহে,
যে খানে আনল দেখ পবন সেথায়,
যে খানে প্রণয় সেথা পাগল হৃদয়।
দুএক নরের চিত্ত, জড় পাদপের মত,
কেবল প্রেমের স্রোত করিতেছে পান,
তথাপি নাহিক হৃদে একটি তুফান।
উহাও ত প্রেম—সত্য উহাও প্রণয়,
প্রেবেশিয়া দেখ কিন্তু উহার হৃদয়।
অতলস্পর্শীয় প্রায়, প্রকাণ্ড শূন্যতা তায়,
আবর্ত্তে আবর্ত্তে প্রেম পশিছে অন্তরে,
কচিৎ কখন মৃদু হিল্লোল উপরে।
ডাকিয়া গোপনে তারে, বল সত্য কহিবারে
প্রাণের ভিতর তার বুঝিবে কি করে?


নহে সে সংসারে সুখী—জীবন তাহার
জ্ঞানের কণ্টকাকীর্ণ—সুধু যন্ত্রণার।
জীবনের মোহ জলে, পরিক্লান্ত দেহ ঢেলে—
যুড়াতে হৃদয় শিক্ষা হয় নাই তার,

সুধু উদ্দেশ্য সাধনে, জীবন কণ্টক-বনে,
শুষ্ক চিত্তে শূন্য বক্ষে করিছে ভ্রমণ,
উদ্বেলতা চিত্তে তার নাহিক কখন।


সে সুখী কি আমি সুখী ভাব একবার।
পাগল আমার কিম্বা হৃদয় তাহার।
অনুভূতি প্রাণহীন, হাঁসি কান্না দুই ক্ষীণ,
প্রবৃত্তি প্রবীণ-হেন হৃদয় যাহার,
কি সুখ সংসারে আছে বুঝি না তাহার।
শুষ্ক কণ্ঠে আজীবন মরুক্ষেত্রে পর্য্যটন,
অতৃপ্ত জীবনে শেষে বিয়োগ আত্মার।