চিত্ত-মুকুর/নিশীথ বিলাপ

উইকিসংকলন থেকে

নিশীথ বিলাপ।


অস্ত যাও নিশানাথ সুদূর অম্বরে
অস্ত যাও তারাবৃন্দ —হাঁসিও না আর,
ডেকোনা কোকিল আর সুললিত স্বরে,
খুলে ফেল চারু বেশ প্রকৃতি তোমার,
আজ ভারতের ঘরে, সে আনন্দ নাহি নরে
মরম বেদনা বুকে, মুখে হাহাকার।
অস্ত যাও জ্যোতিঃপুঞ্জ হ'ক অন্ধকার।


লুকাও সরসীকুল কুমুদ কমলে
সারস মরাল দল লুকাও সত্ত্বর,
করোনা বিকাশ আর নব নব দলে,
লুকাও মুকুলে পুনঃ প্রসূননিকর।
সোহাগে ভাসায়ে কায় সুরভি মলয় বায়
এসো না ভারতে আর প্রণয়ের তরে,
প্রেমের অন্ত্ব্যেষ্টি আজ ভারত ভিতরে।


উঠ উঠ হিমাচল ঘুমাও না আর,
বারেক বদন তুলি কর নিরীক্ষণ,
অনাথা ভারতমাতা চরণে তোমার,
ভাসিছে শোকের নীরে যুগল নয়ন।
নাহি সে সুচারু বেশ, বিষাদে বিমুক্ত কেশ,
মরম-বেদনে তাঁর কাতর জীবন,
উঠ হিমাচল তাঁয় কর সম্ভাষণ।


সৈকত-শয়ন ত্যজি সলিল ঈশ্বরি,
বারেক নেহার দীনা ভারত-জননী,
সকরুণ আর্ত্তনাদে শূন্য ভেদ করি
বিলাপেন রাজমাতা এবে অনাথিনী।
তোমার অতল কোলে, দুখিনীরে লহ তুলে,
রাখ এ মিনতি মম রত্ন প্রসবিনি,
ঘোষিবে এ কীর্ত্তি তব পূরিয়া মেদিনী।


অয়ি শূন্যময়ী নীল অনন্ত-রূপিনি,
অনাথা দুখিনী-দুখ দেখিছ কেমনে!

করিয়ে অনল বৃষ্টি বজ্র প্রসবিনি,
নিবাও অভাগি-দুখ কৃপা বিতরণে;
অথবা নিকটে আসি, লুকাও এ দুখরাশি।
তোমার সুনীল ওই ঘন আবরণে,
জননীর হেন বেশ অসহ্য নয়নে।