তীর্থ-সলিল/রুবাইয়াৎ
রুবাইয়াৎ।
বনচ্ছায়ায় কবিতার পুঁথি পাই যদি একখানি,
পাই যদি এক পাত্র মদিরা, আর যদি তুমি রাণী!
সে বিজনে মোর পার্শ্বে বসিয়া গাহ গো মধুর গান,
বিজন হইবে স্বর্গ আমার তৃপ্তি লভিবে প্রাণ।
ভুলায় যাহাতে অতীত শোচনা ভবিষ্যতের ভয়;
আগামী কল্য! সে ভাবনা আমি উড়ায়ে দিয়েছি হেসে,
আগামী কল্য চ’লে যেতে পারি গত-কল্যের দেশে।
জীবন খাতায় তোমার আমার হিসাব নিকাশ হ’লে,
ভেব না কখনো এমনটি আর হ’বে না ভূমণ্ডলে;
চির দিবসের সাকী আমাদের পাত্রটি হ’তে তা’র
এমন ঢেলেছে কোটি বুদ্বুদ―ঢালিছে সে অনিবার!
মধ্য-মরুর উৎসে ক্ষণিক জীবনের আস্বাদ;
আঁখি পালটিতে, আর কেহ নাই! ছায়া-যাত্রীর দল
নশ্বরতায় লয় হ’য়ে গেছে; ওরে তোরা ছুটে চল।
এই টুকু জানি,―মানব জীবন প্রতি মুহূর্ত্তে ক্ষয়,
এই টুকু খাঁটি, বাকী যাহা বল তাহা মিথ্যার জাল,
বারেক যে ফুল ফুটিল তাহারে চিরতরে নিল কাল।
একটি প্রাণীও ফিরিয়া এলনা পথের বার্ত্তা নিয়ে;
কোটি কোটি লোক আমাদের আগে গিয়েছে গো ওই পথে,
ওর সন্ধান নিতে হ’লে তবু নিজেকেই হ’বে যেতে!
আঁখি যাহা কভু না পায় দেখিতে করিবারে দর্শন;
ফিরে এসে ধীরে চুপে চুপে মোরে কহিল সে “ওরে ভাই,
আমিই স্বর্গ, আমিই নরক, সে আর কোথাও নাই।”
নরক―সে অনুতপ্ত মনের বিকট অন্ধকার;―
যেমন আঁধার হ’তে কিছু আগে বাহির হ’য়েছি সবে,
যেমন আঁধারে এক দিন, হায়, ডুবিতে আবার হ’বে।
প্রথম মাটিতে গড়া হ’য়ে গেছে শেষ মানুষের কায়,
শেষ নবান্ন হ’বে যে ধান্যে তা’রো বীজ আছে তা’য়;
সৃষ্টির সেই আদিম প্রভাত লিখে রেখে গেছে তাই,
বিচার-কর্ত্রী প্রলয় রাত্রি পাঠ যা’ করিবে ভাই।
অনুতাপে মোর ক্ষীণ চিত্তের করিব সঙস্কার;
বিচার ক্ষমতা ছিল কি তখন? ফুল হাতে ঋতুরাজ
জীর্ণ আমার অনুতাপ টুকু ছিন্ন ক’রেছে আজ!
কুসুম-গন্ধি যৌবন-পুঁথি পলে উলটিয়া যায়;
কাল যে পাপিয়া এই তরু শাখে গাহিতে ছিল গো গান,
কোথা হ’তে এসে কোন্ পথে হায় করিল সে প্রস্থান!
মোদের অন্তে এমনি কতই অস্ত উদয় হ’বে;
উদয় শিখরে উঁকি দিয়ে ধীরে তখনো সন্ধ্যা হ’লে,
আমাদের সবে এই খান্টিতে খুঁজিবে সে,―নিষ্ফলে।