পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/১১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পদ্মিনীকে দেখেছিস ? সে কি সত্যই সুন্দরী ? বাদী উত্তর করলে, ‘জার্হাপনা ! দিল্লী আসবার আগে আমি চিতোরে নাচ গান করে জীবন কাটাতেম ; পদ্মিনীর বিয়ের রাত্রে আমি রানীর মহলে নেচে এসেছি ? আল্লাউদ্দীন গালে হাত দিয়ে ভাবতে লাগলেন ; কিছুক্ষণ পরে বলে উঠলেন, ‘পিয়ারী আমার ইচ্ছে করে পদ্মিনীকে এই খাসমহলে নিয়ে আসি ৷’ পিয়ারী বেগম বলে উঠলেন, ‘শাহেনশা, আমাব সাধ যায়, আকাশের চাদটাকে সোনার কোটায় পুরে রাখি ! কথাট আল্লাউদ্দীনের ভালো লাগল না। দিল্লীর বাদশ, যার মুঠোর ভিতর অর্ধেক ভারতবর্ষ, তিনি কি একজন রাজপুত-রানীকে ধরে আনতে পারেন না ? শাহেনশা মুখ গম্ভীর করে উঠে গেলেন— মনে-মনে বলে গেলেন, “থাক পিয়ারী, যদি পদ্মিনীকে আনতে পারি তবে তোমাকে তার বাদী হয়ে থাকতে হবে ।" তার পরদিন লক্ষ-লক্ষ সৈন্য নিয়ে আল্লাউদ্দীন চিত্তেরের মুখে চলে গেলেন। পাঠান সৈন্য যে-দিক দিয়ে গেল সেই দিকে পথের দুই ধারে, ধানের খেত, লোকের বসতি ছারখাব করে যেতে লাগল । তখন বসন্তকাল। সুমস্ত চিতোর জুড়ে দিকে-দিকে আনন্দের রোল উঠেছে—‘হোরি হ্যায়! হোরি হ্যায় ! ঘরে-ঘরে আবিরের ছড়াছড়ি, হাসির হো-হো আর বাসন্তী রঙের বাহার । সেই ফাগুনে, ভরা আনন্দ আর হাসি-খেলার মাঝখানে, একদিন চিতোরে খবর পৌছল আল্লাউদ্দীন আসছেন— ঝড়ের মুখে প্রদীপের মতে চিতোরের সমস্ত আনন্দ একনিমেষে নিবে গেল ! তখন কোথায় রইল রানার রাজসভায় ধ্রুপদ খেয়ালে হোরি বর্ণনা, কোথায় রইল রানীদের অন্দরে ‘ফাগুনমে হোরি মচাও বলে মিষ্টি মুরে মধুর গান, কোথায় লালে-লাল রাস্তায় দলে-দলে হাসি-তামাশ। আর কোথায় বা গোপালজীর মন্দির থেকে রাগ বসন্তে নওবতের সুর ! আবিরে গোলাপে লালে-লাল চিতোরের ঘরে-ঘরে অস্ত্রশস্ত্রের > 0 a