পাতা:অবনীন্দ্র রচনাবলী দ্বিতীয় খণ্ড.djvu/২৩৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

মতন কোথায় উড়ে যাবে তার ঠিকানা নেই। পথে জল খেতে হু-মুঠো খই ছিল, তা তো ঘোড়া-ভূতের সঙ্গে কোথায় উড়ে গেছে। শেষে বীর-বাতাসে আমিও উড়ে যাব নাকি ? শীতেও কঁপিছি, ভয়েও কঁপিছি। পালকি ধরে বীর-বাতাস এক-একবার বাঁকানি দিচ্ছে, আর হাক দিচ্ছি, ‘সামাল, সামাল। ভয়ে জগবন্ধুর নাম ভুলে গেছি। পালকিখানা ছাতার মতো বেহারাদের র্কাধ থেকে উড়ে আমাকে স্বদ্ধ নিয়ে গড়াতে-গড়াতে চলেছে। পিছনে ‘ধর ! ধর!” করে পালকি-বেহারাগুলো ছুটে আসছে। একটা বুড়ো মনসা গাছ, মাথায় তার হলদে চুল, বড়ো বড়ো কাটার বড়শি ফেলে বালির উপর মাছ ধরছিল। মনসাবুড়োর ছিপে মাছ তো পড়ছিল কত! কেবল রাজ্যের খড়কুটো আর পাখির পালক হাওয়ায় ভেসে এসে বুড়োর বড়শিতে আটকা পড়ছিল। এমন সময় আমার চাদরখানা গেল বড়শিতে গেথে। আর যাব কোথা ? পালকিযুদ্ধ বালির উপর উলটে পড়েছি। বেহারাগুলো একবার আমাকে ছাড়াবার জন্তে পালকির ডাণ্ড ধরে আমার চাদরটা ধরে টানাটানি করলে, কিন্তু বাতাসের চোটে কোথায় উড়ে গেল আমার সেই উড়ে বেহারা ছ-টা, তাদের আর টিকিও দেখা গেল না ! মনসাবুড়োর হাসি দেখে কে ! ভাবলে, মস্ত মাছ পেয়েছি। কিন্তু আমার হাতে ভূতপত রী লাঠি আছে তা তো বুড়ো জানে না ! লাঠি দিয়ে যেমন বুড়োর গায়ে খোচা দেওয়া অমনি ভয়ে বুড়োর রক্ত দুধ হয়ে গেছে —সে তাড়াতাড়ি আমাকে ছে:ড় দিয়েছে । পালকিট ঠেলে তুলে বিছানা-পত্তব পোটলা-পুটলি যা যেখানে পড়েছিল গুছিয়ে নিয়ে, চুপটি করে বসে আছি –কখন বেহারাগুলো ফিরে আসে। মনসাবুড়োর গা বেয়ে দবদর করে শাদা দুধের মতো রক্ত পড়ছে। সেও কোনো কথা বলছে না, আমিও শাদা রক্ত দেখে অবাক হয়ে চেয়ে আছি । বুড়ো খুব রেগেছে ; তার গায়ের সব রোয়াগুলো কঁটির মতে সোজা হয়ে উঠেছে। অনেকক্ষণ গো হয়ে বসে থেকে মনসাবুড়ো ૨૨૪