দার্শনিকের রচনায় লোকায়ত বা চার্বাক নামের বস্তুবাদী দর্শনের উল্লেখ দেখতে পাই। সে-সময় ভারতীয় দর্শনের প্রথা অনুসারে পরমত খণ্ডন করে নিজের মত স্থাপন করা হতো। পরমত হিসেবেই এইসব ভাববাদী দার্শনিকেরা চার্বাক বা লোকায়ত দর্শনের বিভিন্ন মতের উল্লেখ করেছেন। আর সেই উল্লেখ থেকেই আমরা চার্বাক বা লোকায়ত দর্শনের বিভিন্ন মতের উল্লেখ করেছেন। আর সেই উল্লেখ থেকেই আমরা চার্বাক দর্শন বিষয়ে কিছু তথ্য জানতে পারি। চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন ছিল সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষের দর্শন যা ছড়া হিসেবে প্রচলিত ছিল মানুষের মুখে মুখে। অলিখিত এই ছড়াই লোকগাথার রূপ পেয়েছিল।
ভারতের ভাববাদ ও বস্তুবাদ দর্শনে ইতিহাস স্পষ্টতই এ-কথাই
বলে—দুই দর্শনের মধ্যে বিতর্কটা প্রধানত
‘আত্মা’কে নিয়ে।
আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখে আত্মা
‘আধ্যত্মবাদ’ শব্দের অর্থ—‘আত্মা সংক্রান্ত মতবাদ’। আধ্যত্মবাদী বা ভাববাদীরা বিশ্বাস করেন—আত্মা দেহাতিরিক্ত কিছু। আত্মা অমর। আত্মার জন্ম নেই, মৃত্যু নেই। আত্মা চিরকাল ছিল, আছে, থাকবে। আত্মার দেহ নেই। আত্মাকে আগুন পোড়াতে পারে না। তলোয়ার কাটতে পারে না। জল ভেজাতে পারে না।
যুক্তিবাদীরা মনে করেন—‘আত্মা’ দেহের-ই ধর্ম। তাই মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে আত্মারও বিনাশ ঘটে।
যুক্তিবাদীরা এমনটা কোন যুক্তিতে মনে করেন? কারণ আধ্যত্মবাদীরা ‘আত্মা’র সংজ্ঞা বলতে বলেছেন—চিন্তা, চেতনা, মন বা চৈতন্য-ই আত্মা। আধ্যত্মবাদীরা মনকে দেহাতিরিক্ত কিছু বলে মনে করেন।
‘আত্মা অবিনশ্বর’ এই ভুল বিশ্বাস থেকেই এসেছে পূর্বজন্মের কর্মফল, জাতিস্মর ও প্ল্যানচেট-এর কল্পনা।
‘জাতিস্মর’ তত্ত্বকে আশ্রয় করে দাঁড়িয়ে রয়েছে পরামনোবিদ্যা বা parapasychology। পরামনোবিজ্ঞানীরা বরাবরই প্রমাণ করতে চেয়েছেন, কোনও কোনও মানুষ তার পূর্বজন্মের স্মৃতিকে উদ্ধার করতে সক্ষম। কিছু কিছু পরমনোবিজ্ঞানী আরও এক ধাপ এগিয়ে এসে বলেছেন—কোনও ব্যক্তিকে সম্মোহন করে তার পূর্বজন্মের স্মৃতি উদ্ধার করা সম্ভব।
জাতিস্মর নিয়ে আলোচনার আগে ‘আত্মা’ নিয়ে আলোচনা সেরে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছি। কারণ পরামনোবিদ্যা আত্মার পুনর্জন্ম থেকেই জাতিস্মরকে আমদানি করেছে। আর, আত্মা অবিনশ্বর এ ধারণা থেকেই এসেছে আত্মার পুনর্জন্ম বা জন্মান্তরবাদ।
প্রায় ধর্মেই আত্মার অস্তিত্বের কথা বলা হয়েছে।