পাতা:অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড) - প্রবীর ঘোষ.pdf/৩৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।
৩৪২
অলৌকিক নয় লৌকিক (প্রথম খণ্ড)
৩৪২

________________

৩৪২ অলৌকিক নয়, লৌকিক (প্রথম খণ্ড) লােক যদি তার নিজের কর্তৃত্ব মনের ওপর রেখে দেয় তবে ভালাে একজন মিডিয়াম হওয়া তার পক্ষে সম্পূর্ণ অসম্ভব।” (মরণের পারে, পৃষ্ঠা-১৪২) স্বামী অভেদানন্দ এই প্রসঙ্গে আরও বলেছেন, “মনে রাখা উচিত যে, মিডিয়াম হবার ভাবটি হলাে একজন মানুষের দেহ ও মনের স্থির তন্দ্রাবিষ্ট অবস্থা। (মরণের পারে, পৃষ্ঠা-১৩৬) মিডিয়াম অবস্থায় উমাদেবী এমন কোনও উত্তর লিখে রাখতে সক্ষম হননি যার দ্বারা অভ্রান্তভাবে বিদেহী-আত্মার আগমন প্রমাণিত হয়। বরং দেখতে পাই বিভিন্ন আত্মা উমাদেবীকে দিয়ে লেখালেও সব আত্মারই হাতের লেখা ছিল একই রকম। | একবার সন্তোষচন্দ্র মজুমদারের বিদেহী আত্মা এলেন উমাদেবীর পেনসিলে। রবীন্দ্রনাথের প্রিয় বন্ধু শ্রীশচীন্দ্র মজুমদারের ছেলে সন্তোষচন্দ্র। আমেরিকায় গিয়েছিলেন কৃষিবিদ্যা পড়তে। ফিরে এসে শান্তিনিকেতনের কাজে নিজেকে নিয়ােগ করেন। মৃত্যুর সময় ছিলেন শ্রীনিকেতনের সচিব। মারা যান ১৯২৬ সালে। সন্তোষচন্দ্রের বিদেহী আত্মাকে রবীন্দ্রনাথ জিজ্ঞেস করেছিলেন : রবীন্দ্রনাথ—তুমি ওখানে কোন কাজে প্রবৃত্ত আছ? সন্তোষচন্দ্র—আমি একটা বাগান তদারকি করি।কিন্তু সে পৃথিবীর ফুলবাগান নয়। রবীন্দ্রনাথ—এখানে যেমন গাছপালা থাকে, সে কি সেইরকম? সন্তোষচন্দ্র—একটি গাছের আত্মার একটি বিশেষ ফুল ক্রমেই শুকিয়ে উঠছে। ঠিক বুঝতে পারছিনে। | ২৮ নভেম্বর প্ল্যানচেটে এলেন মণিলাল গঙ্গোপাধ্যায়ের আত্মা। মণিলাল অবনীন্দ্রনাথের জামাতা। সাহিত্যে, অভিনয়ে, সঙ্গীতে যথেষ্ট খ্যাতি পেয়েছিলেন। ১৯২৯ সালেই মারা যান। মণিলালের বিদেহী আত্মাকে রবীন্দ্রনাথ প্রশ্ন করেছিলেন : —আমি একটা কথা বুঝতে পারিনি সন্তোষের। সেখানে বাগান আবার কী? বুঝতে পারছি না। মণিলাল উত্তর দিয়েছিলেন—গাছের কী আত্মা নেই? আছে।। রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চক্রে গাছ-পালা, শাক-সজি, ঘাস, খড় সবেরই বিদেহী আত্মার অস্তিত্বের খবর আমরা পাই, যে আশ্চর্য খবরটা স্বামী অভেদানন্দের আত্মারা একবারের জন্যেও উচ্চারণ করেনি। বিদেহী আত্মা রবীন্দ্রনাথকে তাদের দেহের আকারের বর্ণনা দিতে গিয়ে বলেছে—“কারও বা ঝড়ের হাওয়ার মতাে কারও বা ফুরফুরে হাওয়া।” আত্মা বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দের কুয়াশার মতাে বর্ণনার সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের ‘হাওয়ার মতাে বর্ণনা মেলে না। বিদেহী আত্মার অস্তিত্ব থাকলে দু’জনের বক্তব্যে মিলটুকু নিশ্চয়ই প্রথম সত্ত্ব হতাে।।