পাতা:আখ্যানমঞ্জরী (তৃতীয় ভাগ) - ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর.pdf/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
স্বপ্নসঞ্চরণ।
৪৩

 যৌবনকাল উত্তীর্ণ হইলে, সাইরিলো সতত সাতিশয় বিষণ্ণচিত্ত ও সর্ব্ববিষয়ে নিতান্ত নিরুৎসাহ হইয়া উঠিলেন, সাংসারিক কোনও বিষয়ে তাঁহার আর অনুরাগমাত্র রহিল না। অবশেষে, সংসারাশ্রমে বিসর্জ্জন দিয়া, তিনি এক ধর্ম্মাশ্রমে প্রবিষ্ট হইলেন। তথায় তিনি স্বয়ং ধর্ম্মচিন্তা, অপেক্ষাকৃত অজ্ঞ ব্যক্তিদিগকে ধর্ম্মবিষয়ে উপদেশদান ও অশেষবিধ কঠোর ব্রতের অনুষ্ঠান করিতে লাগিলেন। অল্প দিনের মধ্যেই, তিনি সর্ব্বাংশে বিশুদ্ধহৃদয়, সদাচারপূত ও উত্তম ধর্ম্মোপদেশক বলিয়া বিলক্ষণ প্রতিপত্তি লাভ করিলেন। কিন্তু, তাঁহার এই প্রতিপত্তি দীর্ঘকালস্থায়িনী হইল না। দিবাভাগে, যে সকল সদনুষ্ঠান দ্বারা, সাধু বলিয়া গণনীয় ও সকলের আদরণীয় হইতেন, রজনীযোগে, স্বপ্নসঞ্চরণকালীন জঘন্য আচরণ দ্বারা, সে সমুদয় তিরোহিত হইয়া যাইত। তিনি, প্রায় প্রত্যহ, নিদ্রিত অবস্থায় শয্যাপরিত্যাগ করিয়া, অন্যান্য গৃহে প্রবেশ করিতেন, এবং পরুষ ও অশ্লীল ভাষার উচ্চারণ করিতে থাকিতেন। ক্রমে ক্রমে, আশ্রমবাসী ব্যক্তিমাত্রেই তাঁহার এই অদ্ভুত আচরণের বিষয় অবগত হইলেন। ধর্ম্মাশ্রমবাসীদিগের পক্ষে, এইরূপে গৃহে গৃহে প্রবেশ ও অপভাষাপ্রয়োগ নিরতিশয় দোষাবহ, সুতরাং, তাহার নিবারণের উপায় করা অতি আবশ্যক। কিন্তু, ধর্ম্মাশ্রমের নিয়মাবলীর বহির্ভূত বলিয়া, তাঁহাকে রজনীযোগে গৃহমধ্যে রুদ্ধ করিয়া রাখা বিহিত বোধ হইল না, সুতরাং, তিনি, প্রতি রাত্রিতেই, ঐরূপ কুৎসিত কাণ্ড করিতে লাগিলেন।