পাতা:আজাদী সৈনিকের ডায়েরী - মুলকর.pdf/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আজাদী সৈনিকের ডায়েরী
১০৩

খর্বাকার দেহ, নাক খেঁদা, চোখ দুটী ছোট, মুখে গোঁফের অল্প রেখা, রঙ বেশ ফর্সা; বয়স প্রায় ৫০ বৎসর হইবে। চেহারা মঙ্গোলীয় ধরণের। পরিধানে ধুতি ঠিক বাঙালীদের মতন; গায়ে শাদা চাদর, মাথায় পাগড়ী, গলায় তুলসীর মালা, কপালে তিলক।

 সিং-এর কুটীর বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। বাঁশের বেড়া, খড়ের ছাউনি। কুটীরের সামনে বারান্দা। উঠানে তুলসী মঞ্চ। বারান্দায় একটী তাঁত রহিয়াছে। একটী ১৪।১৫ বৎসর বয়সের মেয়ে তাঁতে ‘ফনেক্’ শাড়ী বুনিতেছিল। এই সাড়ী তিন হাত চওড়া, পাঁচ হাত লম্বা। দেড় হাত করিয়া কাপড় বুনিয়া পরে দুইটী অংশ সেলাই করিয়া জুড়িয়া দেয়। তাঁতটী নূতন ধরণের— কোমরে বাঁধিয়া হাতে চালাইতে হয়।

 আমি বলিলাম—‘বেশ সুন্দর বোনা হইতেছেতো! চমৎকার পাড়।’

 সিং বলিলেন—‘যুদ্ধের জন্য আমাদের কাজকর্ম্ম সব বন্ধ হইয়া গিয়াছিল। এই কাপড়টী বোনা প্রায় শেষ হইয়া পড়িয়া ছিল। কাপড় নাই। তাই আজ আমার মেয়ে কাপড়টী শেষ করিতেছে!

 মেয়েটাকে দেখিতে বেশ। ইহার পোষাকের মধ্যেও বৈচিত্র্য আছে। পরিধানে ফনেক্ শাড়ী—বক্ষ হইতে পা পর্য্যন্ত অঙ্গ ঢাকিয়াছে। একখানি ওড়নায় মাথা ও দেহের উর্দ্ধাংশ আবৃত। মাথায় এলো খোঁপা, নাকে ও কপালে তিলক। আমার অনুরোধে মেয়েটী কাপড় বোনা দেখাইল।

 আজ সন্ধ্যায় নিত্যানন্দজীর নাটমন্দিরে স্থানীয় লোকদের এক সভা ছিল। নেতাজীর ঘোষণা সিং মণিপুরী ভাষায় অনুবাদ করিয়া শুনাইলেন। কাপ্তেন এম্, এ, মালিক বিষ্ণুপুরের শাসনকর্ত্তা; তিনি নিজে আসিলে ভালো হইত।