শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার জন্য আমাকে বহু সময় দিনে পরিশ্রম করিতে হইয়াছে, সন্দেহ নাই, কিন্তু এমনভাবে আমি সে সমস্ত ব্যবস্থা করিয়াছি যে, আমার বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কোন ব্যাঘাত হয় না, দৈনন্দিন কার্যতালিকা অনুসারে যথাযথ কাজ করিবার ফলেই,—বৈজ্ঞানিক গবেষণা করিবার যথেষ্ট অবসর আমি পাইয়াছি। গ্যেটে সত্যই বলিয়াছেন,—“সময় দীর্ঘ, যদি আমরা ইহার সদ্ব্যবহার করি, তবে অধিকাংশ কাজই এই সময়ের মধ্যেই করা যাইতে পারে।”
বস্তুতঃ, মানুষের প্রতি ভগবানের এই মহৎ দান সম্বন্ধে প্রসিদ্ধ প্রাণিতত্ত্ববিৎ লুই আগাসিজ যাহা বলিয়াছেন, তাহার মর্ম আমি বেশ উপলব্ধি করিতে পারি।
“দশ বৎসর বয়সে আগাসিজ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তৎপূর্বে গৃহেই তিনি শিক্ষালাভ করেন। অতঃপর বিয়েন সহরের একটি বালকদের বিদ্যালয়ে তিনি ও তাঁহার ভ্রাতা অগাষ্ট চার বৎসর পড়েন। কিন্তু লুইয়ের সত্যকার জ্ঞানপিপাসা ছিল এবং দীর্ঘ অবকাশের সুযোগ তিনি সম্পূর্ণরূপে গ্রহণ করিতেন। বহিঃপ্রকৃতির মধ্যে ডুবিয়া থাকিয়া এই সময়ে তিনি আনন্দলাভ করিতেন।” বাঙালী ছেলেরা কবে এরূপ প্রকৃতিপ্রিয়তা লাভ করিবে?
আগাসিজ বলিয়াছেন—“লোকে কেন অলস হয়, আমি ঝুঝিতে পারি না; সময় কাটাইবার উপায় খুঁজিয়া পায় না, লোকের এরূপ অবস্থা কিরূপে হইতে পারে, তাহা বুঝা আমার পক্ষে আরও শক্ত। নিদ্রার সময় ব্যতীত, এমন এক মূহুর্তও নাই, যখন আমি কর্মের আনন্দের মধ্যে ডুবিয়া না থাকি। তোমার নিকট যে সময় বিরক্তিকর বা ক্লান্তিজনক মনে হয়, সেই সময়টা আমাকে দাও, আমি উহা মূল্যবান উপহার বলিয়া মনে করিব। দিন যেন কখন শেষ হয় না, ইহাই আমি ইচ্ছা করি।”
পরলোকগত রসায়নাচার্য স্যার এডোয়ার্ড থর্প আমার Essays and Discourses নামক গ্রন্থ সমালোচনাপ্রসঙ্গে বলিয়াছেন:―
“হিন্দু রাসায়নিকের জীবন-ব্রত”
....“স্যার পি. সি. রায় যে শীঘ্রই ‘সাধারণের সম্পত্তি’ বলিয়া গণ্য হইবেন, ইহা পূর্ব হইতেই বুঝা গিয়াছিল। বিভিন্ন শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সম্মেলন, সাময়িক পত্র, সংবাদপত্র ও দেশের সামাজিক, শিল্পবাণিজ্যগত এবং রাজনৈতিক উন্নতি প্রচেষ্টার সহিত যাহারা সংসৃষ্ট তাহারা জাতীয় কল্যাণের পথ নির্দেশ করিবার জন্য তাঁহাকে বক্তৃতা করিবার জন্য আহ্বান করিতে লাগিল।.......অজীর্ণ-রোগ-গ্রস্ত, ক্ষীণদেহ এই ব্যক্তি দেশের সেবাতেই নিজের জীবন ক্ষয় করিবেন।” (নেচার, ৬ই মার্চ, ১৯১৯)।
তিনি যদি আজ বাঁচিয়া থাকিতেন, তবে বুঝিতে পারিতেন যে, ভগবানের ইচ্ছায় আমার জীবনের কার্য এখনও শেষ হয় নাই। গত ত্রয়োদশবর্ষকাল আমি আমার জীবনে পূর্বের চেয়ে আরও বেশী পরিশ্রম করিয়াছি।
যদি কেহ আমার দৈনিক কার্যক্রম পাঠ করেন, তবে দেখিতে পাইবেন যে, আমার অন্তরঙ্গ বন্ধুদের সঙ্গেও আলাপ পরিচয় করিবার সময় আমার হয় নাই। ২৫ বৎসর পূর্বে, জগদীশচন্দ্র বসু, নীলরতন সরকার, পরেশনাথ সেন (বেথুন কলেজের ভূতপূর্ব অধ্যাপক), হেরম্বচন্দ্র মৈত্র, প্রাণকৃষ্ণ আচার্য প্রভৃতি বন্ধুগণের বাড়ীতে দু এক ঘণ্টা কাটাইতে পারিতাম, তাঁহাদের বাড়ী আমার নিজগৃহতুল্যই ছিল। কিন্তু বিভিন্ন প্রকারের এত বেশী কাজের সঙ্গে জড়িত হওয়াতে, আমার সামাজিক আনন্দের অবসর লোপ পাইয়াছে। সন্ধ্যাবেলাই সাধারণতঃ বন্ধু বান্ধবদের সঙ্গে আলাপ পরিচয়ের সময়, কিন্তু