বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:আত্মচরিত (প্রফুল্লচন্দ্র রায়).djvu/২৭১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
একবিংশ পরিচ্ছেদ
২৩৭

উৎসাহ দেওয়া হয় এবং গবর্ণমেণ্ট যে সমস্ত শিল্প প্রতিষ্ঠা করিয়াছিলেন, সেগুলির পরিচালনা ভার ক্রমে ক্রমে দেশবাসীর উপর অর্পিত হয়।

 “গবর্ণমেণ্ট যদিও কতকগুলি শিল্পের পরিচালনা-ভার ছাড়িয়া দিয়াছিলেন, তথাপি এগুলিকে গবর্ণমেণ্ট সাহায্য করিতেন। ১৮৯৯ সালে জাপান শিল্প সংরক্ষণ সম্বন্ধে স্বাতন্ত্র্য নীতি অবলম্বন করে এবং প্রধান প্রধান শিল্পগুলিকে সংরক্ষণ শুল্ক দ্বারা রক্ষা করিবার ব্যবস্থা করে। ১৮৯৬ সালে পোত-শিল্প ও বাণিজ্যপোতগুলিকে সরকারী বৃত্তি দিবার ব্যবস্থা অবলম্বিত হয়। ১৯১০ সালে এই ব্যবস্থা কিয়ৎপরিমাণে সংশোধিত হয় বটে, কিন্তু এখনও উহা বলবৎ আছে।” গত ইয়োরোপীয় যুদ্ধের সময়, “পৃথিবীতে বাণিজ্যপোতের সংখ্যা হ্রাস হয় এবং জাপান এই সুযোগে নিজেদের বাণিজ্যপোতের সংখ্যা বৃদ্ধি করে। এইরূপে যে জাপানকে ২০ বৎসর পূর্বেও বিদেশী জাহাজের সাহায্যে বহির্বাণিজ্য চালাইতে হইত, সেই জাপান প্রশান্ত মহাসাগরের উপকূলস্থ সমস্ত দেশে বাণিজ্যব্যাপারে প্রধান স্থান অধিকার করে।” ৫০ বৎসর পূর্বে জাপানে কতকগুলি ছোট ছোট জাহাজ মাত্র তৈরী হইত। কিন্তু বর্তমানে জাপানের কারখানায় প্রথম শ্রেণীর সমুদ্রগামী জাহাজ, ড্রেডনট এবং রণতরী তৈরী হইতেছে।[] জাপানের পোত-শিল্প গঠনের পক্ষে অনেক প্রাকৃতিক বাধাবিপত্তি আছে। তাহার খনিতে উৎপন্ন লৌহ ও কয়লা নিকৃষ্ট শ্রেণীর, সে তাহার পিণ্ড লৌহ আমেরিকা এবং ভারতবর্ষের টাটা কোম্পানী ও ইণ্ডিয়ান আয়রন ও ষ্টীল কোম্পানী (আসানসোল) হইতে আমদানী করে এবং তাহা হইতে নিজেদের জাহাজ তৈরীর উপযোগী ইস্পাত নির্মাণ করে। এই বিষয়ে জাপানের অপেক্ষা ভারতের অবস্থা অনেক ভাল, কিন্তু তাহার দুর্ভাগ্য এই যে, তাহার নিজের স্বার্থের সঙ্গে তাহার বিদেশী প্রভুদের স্বার্থের সংঘাত হয় এবং তজ্জন্য তাহার স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়।

 জাপানের তুলনায় আমেরিকা বর্তমান জগতের রাষ্ট্রসমূহের মধ্যে অনেক বেশী উন্নতিশীল। তৎসত্ত্বেও আমেরিকা তাহার পোত-শিল্পের প্রসারের জন্য কিরূপ চেষ্টা করিতেছে, তাহা লক্ষ্য করিবার বিষয়। এ সম্বন্ধে স্যার আর্কিবাল্‌ড্ হার্ডের মন্তব্য আমরা নিম্নে উধৃত করিতেছি:—

 “নৌ-বিভাগ যে দশটি নূতন ক্রুজারের জন্য ফরমাইজ দিয়াছেন, আমেরিকার কংগ্রেস তাহা এখনও মঞ্জুর করে নাই বটে; কিন্তু কংগ্রেস এমন সব ব্যবস্থা অবলম্বন করিয়াছে, যাহার ফলে আমেরিকা পোত-শিল্পে আবার তাহার পূর্ব গৌরবের অধিকারী হইবে। নূতন আইনের প্রধান প্রধান ব্যবস্থাগুলি এই:—

 “জাহাজ নির্মাণ ফাণ্ডে ২৫ কোটী ডলার রাখা হইয়াছে। এই টাকা হইতে শিপিং বোর্ড কোন জাহাজের মালিককে জাহাজ নির্মাণের জন্য সামান্য সুদে ব্যয়ের তিন চতুর্থাংশ পর্যন্ত ঋণ দিতে পারেন। বিশ বৎসরে এই ঋণ শোধ করিতে হইবে। পুরাতন জাহাজের সংস্কার ও পুনর্গঠনের জন্যও এইরূপ ঋণ দেওয়া যাইতে পারিবে।

 “সরকারী কর্মচারীদের সরকারী কাজের জন্য বিদেশী জাহাজের পরিবর্তে আমেরিকার জাহাজই ব্যবহার করিতে হইবে।”

 ইহা হইতে স্পষ্টই বুঝা যাইবে যে, এই নূতন আইনে আমেরিকার জাহাজ নির্মাতাদের লাভ হইবে। কেন না বাজার প্রচলিত সুদ অপেক্ষা অল্প সুদে ঋণ পাওয়ার দরুণ তাহারা সস্তায় জাহাজ তৈরী করিবার এ সুযোগ ত্যাগ করিবে না। বিশেষজ্ঞেরা বলেন,


  1. উইহারা: Industry and Trade of Japan.