হুকুমই হইবে, এই বদমাস কঁসি যাইবে।” তখন ব্রহ্মচারী মৃদুস্বরে গান করিতে লাগিলেন:—
ধীরসমীরে তটিনীতীরে
বসতি বনে বরনারী।
মা কুরু ধনুর্দ্ধর, গমনবিলম্বন
অতি বিধুরা সুকুমারী॥
ইত্যাদি।
নগরে পৌছিলে তাঁহারা কোতয়ালের নিকট নীত হইলেন। কোতয়াল রাজসরকারে এতালা পাঠাইয়া দিয়া ব্রহ্মচারী ও মহেন্দ্রকে সম্প্রতি ফাটকে রাখিলেন। সে কারাগার অতি ভয়ঙ্কর, যে যাইত, সে প্রায় বাহির হইত না; কেন না, বিচার করিবার লোক ছিল না। ইংরেজের জেল নয়—তখন ইংরেজের বিচার ছিল না। আজ নিয়মের দিন—তখন অনিয়মের দিন। নিয়মের দিনে আর অনিয়মের দিনে তুলনা কর।
চতুর্দশ পরিচ্ছেদ
রাত্রি উপস্থিত। কারাগারমধ্যে বদ্ধ সত্যানন্দ মহেন্দ্রকে বলিলেন, “আজ অতি আনন্দের দিন। কেন না, আমরা কারাগারে বদ্ধ হইয়াছি। বল হরে মুরারে!” মহেন্দ্র কাতর স্বরে বলিলেন, “হরে মুরারে!”
সত্য। কাতর কেন বাপু? তুমি এ মহাব্রত গ্রহণ করিলে এ স্ত্রী কন্যা ত অবশ্য ত্যাগ করিতে। আর ত কোন সম্বন্ধ থাকিত না।
মহে। ত্যাগ এক, যমদণ্ড আর। যে শক্তিতে আমি এ ব্রত গ্রহণ করিতাম, সে শক্তি আমার স্ত্রী কন্যার সঙ্গে গিয়াছে।
সত্য। শক্তি হইবে। আমি শক্তি দিব। মহামন্ত্রে দীক্ষিত হও, মহাব্রত গ্রহণ কর।
মহেন্দ্র বিরক্ত হইয়া বলিল, “আমার স্ত্রী কন্যাকে শৃগালে কুকুরে খাইতেছে- আমাকে কোন ব্রতের কথা বলিবেন না।”
সত্য। সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত থাক। সন্তানগণ তোমার স্ত্রীর সৎকার করিয়াছে কন্যাকে লইয়া উপযুক্ত স্থানে রাখিয়াছে।