পাতা:আনন্দমঠ - বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
দ্বিতীয় খণ্ড—দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ
৫৯

 মাকে বুঝাইয়া, জীবানন্দ মার কাছে বিদায় লইয়া আসিলেন। ভৈরবীপুরে সম্প্রতি র্তাহার ভগিনী নিমাইয়ের বিবাহ হইয়াছিল। ভগিনীপতির সঙ্গে জীবানন্দের একটু সম্প্রীতি জন্মিয়াছিল। জীবানন্দ শাস্তিকে লইয়া সেইখানে গেলেন। ভগিনীপতি একটু ভূমি দিল। জীবানন্দ তাহার উপর এক কুটার নির্ম্মাণ করিলেন। তিনি শাস্তিকে লইয়া সেইখানে মুখে বাস করিতে লাগিলেন। স্বামিসহবাসে শাস্তির চরিত্রের পৌরুষ দিন দিন বিলীন বা প্রচ্ছন্ন হইয়া আসিল। রমণীয় রমণীচরিত্রের নিত্য নবোন্মেষ হইতে লাগিল। মুখস্বপ্নের মত র্তাহীদের জীবন নিববাহিত হইত; কিন্তু সহসা সে মুখস্বপ্ন ভঙ্গ হইল। জীবানন্দ সত্যানন্দের হাতে পড়িয়া, সন্তানধর্ম্ম গ্রহণপূর্বক, শান্তিকে পরিত্যাগ করিয়া গেলেন। পরিত্যাগের পর তাহাদের প্রথম সাক্ষাৎ নিমাইয়ের কৌশলে ঘটিল। তাহাই আমি পুর্ব্বপরিচ্ছেদে বর্ণিত করিয়াছি।


দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ

 জীবানন্দ চলিয়া গেলে পর ব্রান্তি নিমাইয়ের দাওয়ার উপর গিয়া বসিল। নিমাই, মেয়ে কোলে করিয় তাহার নিকটে আঁসিয়া বসিল। শাস্তির চোখে আর জল নাই; শান্তি চোখ মুছিয়াছে, মুখ প্রফুল্ল করিয়াছে, একটু একটু হাসিতেছে। কিছু গম্ভীর, কিছু চিস্তাযুক্ত, অন্তমনা। নিমাই বুঝিয়া বলিল,

 “তবু ত দেখা হলো।”

 শান্তি কিছুই উত্তর করিল না। চুপ করিয়া রহিল। নিমাই দেখিল, শাস্তি মনের কথা কিছু বলিবে না। শান্তি মনের কথা বলিতে ভালবাসে না, তাহ নিমাই জানিত। সুতরাং নিমাই চেষ্টা করিয়া অম্বা কথা পীড়িল—বলিল,

 “দেখ দেখি বউ, কেমন মেয়েটি।”

 শান্তি বলিল,

 “মেয়ে কোথা পেলি—তোর মেয়ে হলো কবে লো?”

 নিমা। মরণ আর কি—তুমি যমের বাড়ী যাও—এ যে দাদার মেয়ে।

 নিমাই শাস্তিকে জ্বালাইবার জন্য এ কথাটা বলে নাই। “দাদার মেয়ে” অর্থাৎ দাদার কাছে যে মেয়েটি পাইয়াছি। শান্তি তাহ বুঝিল না; মনে করিল, নিমাই বুঝি সূচ ফুটাইবার চেষ্টা করিতেছে। অতএব শান্তি উত্তর করিল,