পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

নবত্বে মাধুর্য্যে সেগুলো আমার শিশুচিত্তকে টানতো যাদুঘরের অপূর্ব্ব সাজ সরঞ্জামের মত, ভানুমতীর ভেল্কির ঝাঁপীর মত। মা যখন দুপুর বেলা ঘুমোতেন তখন তার দু’ একটা ভেঙে নিয়ে আত্মসাৎ করে কি আনন্দই যে হতো সে আজ আর বলে বোঝাবার নয়।

 কবে যে আমরা এই বাড়ী ছেড়ে লালা তারিণীপ্রসাদের বাড়ীতে এলাম তা’ আমার এখন আর স্মরণ নেই। শুনেছি প্রথম যৌবনে মা আমার ছিলেন ডাকসাইটে রূপসী, মা ও বাবার মিলন ছিল গভীর প্রেমের মিলন। সেই প্রেমে ক্রমে ক্রমে চিড় খেয়ে গেল—মা দাদার জন্মের পর শনৈঃ শনৈঃ পাগল হতে লাগলেন। তবু বাবার সে ভালবাসা আমার পাগলী মাকে আরও অনেক দিন ঘিরে রেখেছিল—সযত্ন বাহুর বন্ধনে। আমরা চার ভাই ও এক বোন, বড় শ্রীবিনয়ভূষণ ঘোষ, মেজ শ্রীমনোমোহন ঘোষ, সেজ শ্রীঅরবিন্দ ঘোষ, তার পরেই দিদি সরোজিনী ঘোষ, এবং সব শেষে সর্ব্বকনিষ্ঠ আমি। আর একটি ভাই শ্রীঅরবিন্দের পর জন্ম নিয়ে মারা যায়; সে যে কেন এসেছিল, কেনই বা একটা উঁকি দিয়ে অমন করে কোন্ অচিন জগতের উদ্দেশে চলে গেল তা বলা কঠিন। কে বা জানে এই জন্ম ও মরণের অতল রহস্য, মানুষের বুদ্ধির মাপ জোকে তার কোন হিসাব হদিস আছে কি না সন্দেহ।

 মায়ের প্রতি বাবার ভালবাসার অমন প্রবল নদীতে ঠিক কবে থেকে যে ভাটা পড়লো সে ইতিহাস আমার অজ্ঞাত;