পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/১৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

মানুষের হৃদয়ের কাহিনী চির দিনই গোপন-পুরীর কথা, ক’জন তার দুয়ার খুলে জগতের রূঢ় কৌতূহলী চোখের উপর ধরতে পেরেছে? মায়ের এমন করে পাগল হওয়ায় বাবা যে খুব ব্যথা পেয়েছিলেন, আর সেই মর্ম্মন্তুদ দুঃখ ভোলার জন্যেই মদ খাওয়া ধরেছিলেন তা আমার দিদিমার (শ্রীমতী নিস্তারিণী বসু) মুখে শুনেছি। অত বড় ঋষিতুল্য রাজনারায়ণ বসুও যৌবনে মদ গরু থেতেন—সে সময়টাই ছিল ঐ রকম-সাহেব-ঘেষা যুগ! পাশ্চাত্যের মৌতো-গোরী নেশায় সবাই তখন পাগল ও উন্মার্গগামী। প্রথম ইংরাজি শিক্ষার আবহাওয়া, হিন্দুসমাজের গোঁড়ামীর বিরুদ্ধে প্রথম তরুণ মনের অভিযান, অধঃপতিত দেশের চোখে পাশ্চাত্যের জ্ঞান-বিজ্ঞান ও সাহিত্য-কলার প্রথম তীব্র জ্যোতিঃ—তখন কি পা সামলে হিসাব করে চলার কাল? আর অতশত হিসাব যারা করে জীবনের পথে তারা চলে না আদৌ, তারা পিতৃ-পিতামহের ভূপর্য্যটনের, দিগ্বিজয়ের ও দুর্গম স্বর্গারোহণের ফল বসে বসে ভাঙিয়ে খায় আর বৃথা গর্ব্ব ও আস্ফালন করে ব্যর্থ দিনগুলো কাটায়। মদ খাওয়া বা উচ্ছৃঙ্খল হওয়া ওগুলো হচ্ছে মানুষের জীবনের মাত্রা, খুব মারাত্মক একটা কিছুই এসব নয়, মানুষের নৈতিক শুচিবায়ুই এ সবকে এমন ভীষণ করে তুলেছে।

 দাদাবাবু বলতেন বাবা ছিলেন আদর্শ চরিত্রের ছেলে, ধর্ম্মে তাঁর ছিল খুব টান, তাঁর ছেঁড়া খোঁড়া কাগজের মাঝে

১০