পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

করা সে এক অদ্ভুত নিকার বকার ও ফ্রক। ও আমরা ছিলাম অযত্নে পীড়নে অর্দ্ধাহারে লালিত জীর্ণ শীর্ণ কৃশকায় ভীরু ‘দুটি’ ছেলে মেয়ে। দিদিমার হাতে গড়া একখানা পূরো চন্দ্রপুলী পাওয়া আর প্রহার থেকে অব্যাহতি এই মহোচ্ছবের ছিল সব চেয়ে বড় অঙ্গ।

 রোহিণীর বাড়ীর প্রকাণ্ড কম্পাউণ্ডের ধার দিয়ে বাইরের পথ বেয়ে চলে যেত বছরে একদিন দশমীর ভাসানের মিছিল। তারিণী বাবুদের ক’ভাইএর বাড়ী থেকে ও রোহিণীর ঠাকুরদের (জমিদার) রাজবাড়ী থেকে বেরুত সারে সারে প্রতিমা—রাঙতার ও সোণারূপার সাজে ঝলমল করতে করতে মশাল আতসবাজী ধ্বজ পতাকা ও জরির সাজপরা হাতি ও ঘোড়া সমেত। আমরা কম্পাউণ্ডের Cactus বেড়ার ধার ঘেঁসে দাঁড়িয়ে বিস্ফারিত নেত্রে দেখতাম এই অপূর্ব্ব সমারোহ ও জনকোলাহল। পৃথিবীর কোথায় এত মানুষ থাকে, হঠাৎ কোথা হ’তে এসে জড়ো হয়; শিশু মন তার কোন মীমাংসাই, কোন কূলকিনারাই করে উঠতে পারতো না। ঠাকুর ভাসান হয়ে গেলে আসতে বাঁকে করে লালাবাবুদের ওখান থেকে ও রোহিণীর ঠাকুরবাড়ী থেকে ভারে ভারে মেঠাই জিলেবী, প্যাঁড়া, বালুসাই, খাজা, হালুয়া, পুরী ইত্যাদি লোভনীয় মিষ্টান্নের রাশি। এক একটা কমলা লেবুর মত বড় বড় মেঠাই দেখে আনন্দের আতিশয্যে আমাদের নিশ্বাস ফেলা দায় হতো।

 এই শৈশবের পাগলা গারদের জীবনে সব চেয়ে ভয়াবহ

২৮