পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

এরও মাঝে অবশ্য একটা মদ্যপের উত্তেজনাময় আনন্দ আছে, দশজনের সঙ্গে থাকার (herd-consciousnessএর) মায়া আছে, কৃত্রিম বিলাস-বিপণীর ও নৃত্যশালার টান আছে, ভোগের ঘূর্ণ্যাবর্ত্তে আপনাকে ক্ষয় করে ফেলার—উড়ে চলার মোহ আছে। কিন্তু অবুঝ শিশুর কি তাই? সে তো কৃত্রিমতার স্বাদ এখনও পায় নি, তার স্মৃতির পাতায় জন্মজন্মান্তরের প্রকৃতি মায়ের রূপই যে সবার আগে বেশি করে জাগে। এতথানি বয়স হয়ে এখন তো বেশ বুঝতে পারি প্রকৃতির ঐ বিচ্ছিন্ন কোলে আবার ফিরে গিয়ে আমি কতখানি মানুষ হয়েছি আর কতটুকুই বা শিখেছি তোমাদের এই কৃত্রিম শিক্ষার তাড়নায়।

 আগেই বলেছি দশ বছর বয়স পর্য্যন্ত আমার অক্ষর পরিচয় অবধি হয় নি! পাগল মায়ের কাছে আমার সে ছিল এক বন্য জীবন। বইএর মুখ সেখানে কখন দেখতে পেতুম না। শুধু যে বর্ণ-জ্ঞানই হয় নি তা নয়, বাইরের জগতের সম্বন্ধে আমার মত অত বড় আনাড়ী এক গভীর লোকালয়হীন বনে ছাড়া আর কোথায়ও সম্ভব নয়। সহর কি, গ্রাম কি, নদী নালা পর্ব্বত আকাশ কোন্‌টা কি তার জ্ঞান ছিল একেবারে অস্পষ্ট, চোখে দেখা অধিকাংশ বস্তুর আসল নামই আমরা জানতুম না, খেয়াল মত নিজে যা হোক একটা নাম দিতুম। ছেলে মেয়েকে লেখা পড়া শেখাতে হ’লে যে অতি শৈশবে বই নিয়ে মাষ্টারের শাসনের তলায় বসাতে হবে এ ধারণা যে কতখানি ভুল তার এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত আমি স্বয়ং। মায়ের কাছ থেকে ফিরে এসেও স্কুল

৩৫