পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৪৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

ঝম্ফ শুরু করে দিত। এমন কি, তিনি যখন তার দৃষ্টির বাইরে আছেন—দারোয়ান গেটও খোলে নি, তখনই সে টের পেত যে তার মনিব এসেছে।

 আমার সজ্ঞানে এই প্রথম বাবার কলকেতার বাড়ীতে আসা—সে এক মহোচ্ছব ব্যাপার। তাঁর হারানো সন্তানকে ফিরে পাবার আনন্দে আমাকে সে কি আদরের ঘটা! বাবার সঙ্গে সঙ্গে বাড়ী ভরে গেল বিস্কুট পনির মাখম ফল মূল তরি তরকারী আদি সুখাদ্যের প্লাবনে। দেখলুম বাবার কাছে দিদির ও আমার সমান আদর, সে ভালবাসা মায়ের স্নেহের মত একচোখো নয়, কোন প্রতিদানের প্রত্যাশা রাখে না বলেই বাবার সে ভালবাসা প্রতিদানে বঞ্চিত হলেও কারু ওপর বিরূপ হয় না। তারপর থেকে অনেক পরিবারে অনেক ক্ষেত্রে দেখেছি ভালবাসার এই কাঙাল ভিখারীর রূপ, কবিস্তুতি ও কিম্বদন্তির দ্বারা আকাশে তুলে ধরা মাতৃস্নেহ—তাও যে কতখানি স্বার্থপর হতে পারে তা’ বেশ বোঝা যায় যখন দেখি মা সেই সম্ভানটিকে হৃদয়ের সব তত্ত্বগুলি দিয়ে জড়িয়ে বুকে রাখছেন যে তাঁকে অসহায়ের মত আশ্রয় করছে, অহরহ মন জুগিয়ে ভালবাসার সাংসারিক প্রতিদান দিচ্ছে। যে ছেলে বা মেয়েটী একটু রাগী বা একবগ্‌গা তাকে মা বাপের কাছে সইতে হচ্ছে তাড়না গঞ্জনা আর অবহেলা। তবু বাধ্য মমতাময় সন্তানকে ফেলে অবাধ্য চরিত্রহীন সন্তানকেই মা যে কোন কোন ক্ষেত্রে অবশ হচ্ছে চিরটা কাল ভালবেসেই