পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

অসম্পূর্ণ ছাদ থেকে পড়ে তার অস্থি দিয়ে এই বাড়ীখানি গড়বার সাহায্য করে গেছে সে মায়া আজও সে কাটিয়ে উঠতে পারে নি। রাত বারটা একটার সময় সবাই দেখে সে তার বাবরী চুল নিয়ে খাটো হাতকাটা কুর্ত্তা পরে কালো মুস্কো জোয়ান বলিষ্ঠ শরীরটির রূপে দশ দিক আঁধার করে এসে গেট দিয়ে বাড়ীতে ঢোকে এবং বাড়ীটি একবার প্রদক্ষিণ করে বেরিয়ে যায়, কখনও বা ছাদে উঠে ছোট ছাদের গায়ে গয়লাদের বাড়ীর দেওয়াল বেয়ে গজানো যজ্ঞী ডুমুর গাছটীর কাছে গিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়। আশ্চর্য্য এই জাতের গণ্ডী,—এই আভিজাত্য ও দারিদ্র্যের সীমা; ভূতের দেশেও এটা অক্ষুণ্ণ ভাবে টিঁকে আছে। এখানকার রাজা মরে সেখানেও মুকুট মাথায় দণ্ড হাতে বেড়ায়, এখানকার শ্রমজীবীরা সেখানেও বোধ হয় গতর খাটিয়ে যায়। আমাদের দারোয়ান রামরাজ তেওয়ারী খুব ওস্তাদ লাঠিখেলোয়াড় ছিল, সাহসীও কম ছিল না, তার কাছে কে নাকি এই ভূতের গল্প করায় সে জিদ করে সেই দিন তার খাটিয়াটিকে বারাণ্ডায় আড়াআড়ি ভাবে রেখে ভূতের পথ রুখে শুয়েছিল। রাত্রে যথা সময়ে ভূতপ্রবর এসে এই অনধিকার চর্চ্চা ও tresspassএ চটে তেওয়ারীজীর পায়ের বুড়ো আঙুলটা শুধু চেপে ধরা এবং তাতেই তেওয়ারীজীর জেগে পৈতা হাতে রামনাম জপ। সোরগোলে তো আমরা সব উঠে পড়লুম; ততক্ষণ ভূতটি ছাদে উঠে ঐ ডুমুর গাছে মিলিয়ে গেছে।

৪৯