পাতা:আমার আত্মকথা - বারীন্দ্রকুমার ঘোষ.pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
আমার আত্মকথা

দিশা” গল্পের বইএ ‘পাতাল পুরীর দুয়ার’ গল্পে দেখিয়েছি—অন্ধ এক যক্ষপুরী আছে আমাদের প্রাণ সত্তার তলায়। সেখান থেকে আসে দুঃখের হা হুতাশের কালো ঝড় আর আত্মঘাতের প্রেরণা। একবার যে সংযম ও মনের বাঁধ হারিয়ে এদের নিশিডাকে সাড়া দিয়েছে তাকে এরা ক্রমে পেয়ে বসে, তখন হয় হিষ্টিরিয়া বা নিউর‍্যাস্থেনীয়ার আধপাগল রোগীর সৃষ্টি। তাকে কে যেন ক্রমাগত ডেকে ডেকে বলতে থাকে, “আর কেন, তোমার তো সুখসাধ সব ফুরোলো; আর কেন, এইবার জুড়োও।” জগতে দুঃখ আমাদের পাশে পাশে ছায়ার মত চলছেই, দুঃখে ভেঙে পড়তে নেই; মনের জোর নিয়ে দুঃখের দিকে যে হেসে চাইতে শিখেছে তার দুঃখের বোঝা হালকা হয়, সুখের দিন আবার আসেই। কারণ, আসল দুঃখটার পরিমাণ খুব কম, আমাদের মন-প্রাণের দুশ্চিন্তা, নৈরাশ্য ও জ্বালা দিয়ে ওটাকে আমরা বাড়িয়ে তুলি অসম্ভব রকম বেশি।

 পুলিশ দারোগাটি শিয়ালদহের থানায় ছিলেন চাকরীতে বাহাল, মদের মাত্রার তারতম্য অনুযায়ী কখন হতেন সাবইন্সপেক্টর আর কখন হতেন হেড কনষ্টেবল। আমাদের দুই পরিবারে ছিল ঘন ঘন যাতায়াত! তাদের দু’একটি ছেলে এসে কখনও কখনও আমাদের গোমস্ লেনের বাড়ীতে থাকতো; তাদের বাড়ী থেকে আসতো বড়ই মুখরোচক লুচী, চচ্চড়ি, ছ্যাঁচড়া, আলুর দম, ক্ষীর ইত্যাদি; চপ, কাটলেট, কেক্, বিস্কুট খেয়ে খেয়ে আমার শ্রান্ত জীবে তা’ যে কি মধুর লাগতো

৫৭