পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
কোচিন
১০৯

শীর্ণসূত্র বক্রাকারে অঙ্কিত; কিন্তু সমস্তই বেশ পরিস্ফুট ও দৃষ্টিগ্রাহ;— মনে হয় যেন পশ্চাৎ হইতে আলোকিত; বেশ বুঝা যায়, উহা একটা সামান্য চক্রমাত্র নহে, পরন্তু এমন একটি গোলক, যাহা নিরাধার হইয়া মহাশূন্যে ঝুলিতেছে। কোন-একটা পদার্থ বিনা-অবলম্বনে রহিয়াছেমনে করিতে গেলে,—আমাদের অর্জিত সংস্কার যাহাই হউক-ভারসাম্য ও গুরুত্বের যে স্বাভাবিক সংস্কার আমাদের মনোমধ্যে নিহিত আছে, সেই স্বাভাবিক সংস্কারের বশে আমাদের চিত্ত একটু আকুল হইয়া উঠে।

 অন্ধকার হইয়া আসিল। মৎস্যদিগকে আকর্ষণ করিবার জন্য জেলেরা তাহাদের মশাল জলিল; গান থামিল; এবং সমস্তই নিদ্রামগ্ন বলিয়া মনে হইতে লাগিল। কেবল, আমার চল্লিশ জন দাড়ীর দাড় জলের উপর যন্ত্রবৎ অবিরাম পড়িতেছে;—প্রভাত হইতে আরম্ভ করিয়া,তাহারা আমাকে ক্রমাগত উত্তরাভিমুখে লইয়া যাইতেছে।

 তালীবনের পশ্চাতে হঠাৎ যেন একটা আগুন জ্বলিয়া উঠিল; ইহা সুর্য্যের উদয়। সারারাত্রি আমার নৌকা চড়ায় ঠেকিয়া ঠেকিয়া অবশেষে লালমাটির একটি ছোট পাহাড়ের নীচে আসিয়া লাগিল। এইখানে বিল শেষ হইয়াছে। ইহাই ত্রিচূড়ের ঘাট;—শতশত নৌকায় সমাচ্ছন্ন। উহাদের সম্মুভাগ “গণ্ডোলার মত। এই নৌকাগুলি এখনও নিদ্রামগ্ন।

 ব্রাহ্মণ্যধর্ম্ম্মে অতীব নিষ্ঠাবান্ ও অতীব রক্ষণশীল বিচূড়নগর এখান হইতে আরো অর্ধক্রোশ দূরে-তরুপুঞ্জের মধ্যে নিমজ্জিত। বয়েল-গাড়ি করিয়া যখন আমি সেখানে পৌঁছিলাম, তখন সেখানকার লোকেরা সত্রে জাগিয়াছে। এই সব চুনকামকরা কাঠের বাড়ীর উর্ধে তালবৃক্ষসকল বায়ুবেগে আন্দোলিত হইতেছে। একটা ঠাণ্ডা ঝোড়ো বাতাস উঠিয়া, রক্তিম মেঘপুঞ্জের ন্যায় ধূলিরাশি উড়াইয়া, গাছপালাদিগকে হেলাইতেছে। পেটাই তাঁবার ও শস্যদানার ছোট-ছোট দোকান; আলুলিকুন্তল বটবৃক্ষশ্রেণী, সমস্তই মালাবারপ্রদেশের অন্যান্য নগরেরই