পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/১৯৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
হৈদরাবাদে।
১৮৯

সুদূর মরুভূমিতে গিয়া শেষ হইয়াছে। এমনই ত প্রাকারটি ভীমদর্শন—তাহার উপর আবার একটা বিরাট্‌কায় প্রকাণ্ড দুর্গনগর সমুত্থিত;—আসলে পর্ব্বত, কিন্তু মানুষ ইহাকে এইরূপ কাজে লাগাইয়াছে। ইহা সেই শ্রেণীর পর্ব্বত—সেই পাষাণস্তূপ, যাহা অত্রত্য ভূভাগের একটা বিস্ময়জনক অপূর্ব্ব বিশেষত্ব। পূর্ব্বতন রাজাদিগের ও জনসাধারণের চিত্তে বিরাট পদার্থের জন্য—অলৌকিক পদার্থের জন্য যে একটা আকাঙ্ক্ষা ছিল, তাহা এই ক্ষেত্রে পূর্ণমাত্রায় পরিতৃপ্ত হইয়াছে। প্রকাণ্ড-প্রকাণ্ড শিলারাশির মধ্যে অসংখ্য প্রাচীর পরস্পরকে বেষ্টন করিয়া আছে—পরস্পরের উপর চাপিয়া আছে;—উহাদের দন্তুর রেখাবলী পরস্পরের সহিত জড়াইয়া গিয়াছে। যে সকল গণ্ডশৈল দুঃসাহসীর ন্যায় অতিমাত্র ঝুঁকিয়া আছে, তাহাদের ঠিক ধারেই বুরুজসকল সম্মুখে প্রসারিত;—নীচে অতলস্পর্শ খাত। উচ্চতার বিভিন্ন ধাপে,—কত মস্‌জিদ, কত জটিল-নক্‌সার খিলান, কত প্রকাণ্ড পোস্তার গাঁথুনি। খেয়ালের ঝোঁকেই হউক, কিম্বা কোন উপধর্ম্মের খাতিরেই হউক,—সর্ব্বোচ্চ শিখরের উপর একটা গণ্ডশৈল এরূপভাবে স্থাপিত যে, মনে হয় যেন একটা গোলাকার পশু চূড়ার উপরে আসনপিঁড়ি হইয়া বসিয়া আছে।

 এই মৃতনগরের প্রবেশপথে ধাতু ও পাথরের গোলাগুলি স্তূপাকারে সজ্জিত এবং পুরাকালীন সমস্ত যুদ্ধ-আয়োজন প্রস্তুত রহিয়াছে;—ইহাদেরি পাশাপাশি “পুনরাবৃত্তিকারী” আধুনিক বন্দুকসকল পুঞ্জীকৃত। নিজামের সিপাইশান্ত্রীরা পাহারা দিতেছে। প্রবেশপথে উহাদিগকে প্রবেশানুমতিপত্র দেখাইতে হয়। এই সমস্ত ভগ্নাবশেষের মধ্যে ইচ্ছা করিলেই প্রবেশ করা যায় না; এখনও উহা দুষ্প্রবেশ্য দুর্গরূপে বিদ্যমান। শোনা যায়, নিজাম তাঁহার গুপ্তনিধি এইখানেই লুকাইয়া রাখিয়াছেন।

 এই গল্কণ্ডার দ্বারগুলি অতীব ভীষণ;—বহুলোকের সমবেত চেষ্টা ভিন্ন উহা উদ্ঘাটিত হয় না। প্রাকারভিত্তির গভীরদেশে দ্বারের