পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
২৩০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ

ঘুঘু, বড়-বড় ময়ুর, ছোট-ঘোট গায়কবিহঙ্গ এইখানে আসিয়া জড় হইয়াছে এবং এই সন্ন্যাসীরা আহারের পর যে অন্ন উহাদের জন্য রাখিয়া দেয় তাহাই উহারা খুঁটিয়া-খুঁটিয়া খায়।

 যদি কোন পথিক সন্ন্যাসিত্রয়ের সম্মুখে আসিয়া দাঁড়ায় এবং উহাদের সহিত কথা কহে—সন্ন্যাসীরা কখন-কথন ইঙ্গিতের দ্বারা ও একপ্রকার অমনস্ক স্মিতহাস্যসহকারে কুটীরচ্ছায়াতলে বসিবার জন্য তাহাকে আহ্বান করে। কিন্তু সেই ভূমিখণ্ডটি এরূপ সযত্নে সম্মার্জ্জিত,পাছে আবার অপরিষ্কার হয়, এইজন্য উহারা পথিককে দূরে জুতা রাখিয়া আসিতে অনুরোধ করে। পরক্ষণেই আবার তাঁহাদের স্তিমিতনেত্র ধ্যানে নিমগ্ন হয়; তাঁহার পর, যখন ইচ্ছা তুমি চলিয়া যাও,আর উহারা তোমার সহিত কথা কহিবে না—তোমার দিকে একবার চাহিয়াও দেখিবে না।

 এই বনমধ্যস্থ সরোবরটি উদয়পুরহারাজের। কেবল তাঁহার প্রাসাদগুলি এবং চিরশুভ্র কতকগুলি পুরাতন মন্দির এই সরোবরে প্রতিবিম্বিত হইয়া থাকে। সরোবরের মধ্যস্থলে-দুইটি ছোটো-ছোটো দ্বীপ এবং সেই দ্বীপের উপর আরও কতকগুলি প্রাসাদ ও প্রাচীরবেষ্টিত উদ্যান রহিয়াছে। তীরভূমির সর্ব্বত্রই ঝোপঝাড় ও গাছে-গাছে জড়াজড়ি। চারিধারে উচ্চ খাড়া পাহাড়-মরা-বনের গালিচা যেন তাহাতে বিছানো রহিয়াছে; ইতস্তত, কোন কোন সূক্ষ্মাগ্র চূড়ার উপর গুবাকালের কোন-একটি ধবলপ্রভ দুর্গপ্রাসাদ, কোন-একটি ক্ষুদ্র দেবমন্দির ইগল্‌পক্ষীর ন্যায় খুব উচ্চে বিরাজমান। গাছের যে-সব ডালপালা একেবারে জলের ধারে মুইয়া পড়িয়াছে, সেই সব ডালপালা এখনো সবুজ; তা ছাড়া, যে দিকে দৃষ্টিপাত কর, সর্ব্বত্রই অকালশরতের “ছ্যাত্‌লা” অথবা শীতের একঘেয়ে ছাই-রং।

 আজ সর্ব্বপ্রথমে সন্ন্যাসিত্রয়ের একটু বাস্তবিক নড়াচড়া দেখিলাম। আজ সূর্যাস্তের সময় এই সুরম্য বনে প্রবেশ করিয়াছিলাম।