পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/২৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
রাজপুতরাজার গৃহে।
২৬৫

মনে হইল, বুঝি কেহ আমার পিছনে কোন এক অপূর্ব্ব আলোকের দীপ ধরিয়াছে—কিংবা হয় ত কেহ বৈদ্যুতিক দীপের শুভ্ররশ্মি আমার উপর প্রক্ষেপ করিয়াছে;—কিন্তু আসলে তাহা নহে। যাহার কথা আমি ভুলিয়া গিয়াছিলাম, সেই গোলাকার পূর্ণচন্দ্র—সেই রাজদরবারের চন্দ্রমা, ইহারি মধ্যে স্বপদে প্রতিষ্ঠিত হইয়া স্বকার্য্যে প্রবৃত্ত হইয়াছেন;—এতই সহসা এদেশে দিবাবসান হয়। অন্য স্থাবরপদার্থেরও সুপরিস্ফুট ছায়া সর্ব্বত্র পতিত হইয়াছে;—মধ্যে-মধ্যে ছায়া আলোকের দ্বন্দ্ব চলিতেছে। চান্দ্র-দরবারের ছাদের উপর চন্দ্রমা স্বকীয় শুভ্রমহিমায় বিরাজ করিতেছেন।

 উক্ত উৎকট বর্ব্বর বাদ্যধ্বনি থামিয়া গেলে আমি নীচে নামিব; এই সময়ে, কত খাড়া সিঁড়ি দিয়া, কত সরু বারণ্ডা-পথ দিয়া, কত দালানের মধ্য দিয়া একাকী এই রাত্রিকালে আমায় নামিতে হইবে;—আর রাত্রিকালে এই প্রাসাদটি বানর ও অপচ্ছায়াদিগেরই আশ্রয়স্থান। তাই, ওই বাদ্যধ্বনি না থামিলে আমার চলিতে সাহস হইতেছে না।

 বড়ই বিলম্ব হইতেছে,—বড়ই বিলম্ব হইতেছে। এই সময়ের মধ্যে আকাশে সমস্ত তারাই ফুটিয়া উঠিল।

 এই স্থানটি যেমন একদিকে রাজমহিমায় মহিমান্বিত—তেমনি আবার নিভৃত-নিরালয়। যে রাজারা এই চাঁদনী-দরবারের কল্পনা করিয়াছিলেন, তাঁহাদের কল্পনার দৌড় না জানি কতটা ছিল!

 যাহা হউক, অর্দ্ধঘণ্টার পরে, ঢাকের বাদ্য ও পবিত্র পঙ্খের নিনাদ একটু প্রশমিত হইল। শঙ্খনাদের টানটা এখনো চলিয়াছে—তবে, একটু মৃদুভাবে; মধ্যে-মধ্যে আবার যেন প্রাণপণে ধ্বনিত হইতেছে;— তবে এখন একটু রহিয়া-রহিয়া। এইবার যেন শব্দটার মরণযন্ত্রণা উপস্থিত,—এইবার মরিল;—সমস্ত শক্তি নিঃশেষিত হওয়াতেই যেন মরিল। আবার সব নিস্তব্ধ। সকলের তলদেশ,—উপত্যকার গভীর অন্তস্তল—অম্বরের