পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৩৪৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
প্রভাতমহিমা।
৩৪৩

পশুরাও সূর্য্যের উদয়োৎসব দেখিতেছে এবং এই সময়ের মাহাত্ম্য যেন বুঝিয়াই তাহাদের নিজের ধরণে পূজার্চ্চনায় প্রবৃত্ত হইয়াছে। মেষ ও ছাগল নাবিতেছে, ব্যস্তভাবে কুকুর নাবিতেছে, বানর নাবিতেছে।

 রাত্রির শিশিরে বাতাস যেন শীতে জমাট হইয়া গিয়াছিল, এক্ষণে সূর্য্য—সহস্রকিরণ সূর্য্য সেই বায়ুতে শুভ উত্তাপ আনয়ন করিল। কুলুঙ্গি কিংবা বেদীর আকারে ছোট-ছোট পাথরের গাঁথুনি, সোপানের ধাপে-ধাপে সজ্জিত—কোনটাতে বিষ্ণুর বিগ্রহ, কোনটাতে বহুবাহুবিশিষ্ট গণেশের বিগ্রহ। এই সকল বিগ্রহের গাত্র এখনও শুষ্ককর্দ্দমে লিপ্ত; এবং মনুষ্যভস্মে পরিষিক্ত হইয়া ইহারা অনেকমাস যাবৎ ক্ষুব্ধ নদীর জলগর্ভে নিদ্রিত ছিল। এক্ষণে ইহাদের উপর সূর্য্যরশ্মি পতিত হইয়াছে। এখনও সূর্য্য জলন্ত কিরণ বর্ষণ করিতেছে, তাই লোকেরা বড় বড় ছাতার তলে আশ্রয় লইয়াছে। ছাতাগুলা মাটীতে পোঁতা—দেখিতে বিরাট্‌ ব্যাঙের ছাতার মত। পবিত্র নগরীর পাদদেশে এইরূপ রাশিরাশি ছাতা উদ্ঘাটিত। এদিকে ‌ঊর্ধ্বদেশে, পুরাতন প্রাসাদগুলা প্রভাতসমাগমে যেন নবযৌবনে উৎফুল্ল হইয়া জাগিয়া উঠিয়াছে। মন্দিরের লোহিত চূড়াসকল আলোকে উদ্ভাসিত হইয়া উঠিয়াছে, চূড়ার স্বর্ণময় অগ্রভাগ, স্বর্ণময় ত্রিশূল ঝিক্‌মিক্ করিতেছে।

 অসংখ্য ডিঙির উপরে এবং নীচের সোপানধাপের উপরে ভক্তেরা তাহাদের পুষ্পমাল্য ও ঘটি রাখিয়া কাপড় ছাড়িতে লাগিল। শাদা ও গোলাপী রঙের বস্ত্র, বিবিধ রঙের শাল ইতস্তত ফেলিতে লাগিল, কিংবা বাঁশের উপর ঝুলাইয়া রাখিল। তখন তাঁহাদের দিব্য নগ্নকায় বাহির হইয়া পড়িল—ঘোব কিংবা ফিঁকা পিতলের রং। পুরুষেরা যেমন ছিপ্‌ছিপে, তেমনি পালোয়ানি-ধরণে বলিষ্ঠ; তাহাদের চক্ষু অগ্নিময়। উহারা পূতজলে আকণ্ঠ প্রবেশ করিল। স্ত্রীলোকেরা ততটা চ্যুতবস্ত্র নহে;