পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৫৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবাঙ্কুর রাজ্যে।
৫১

পুরোহিত উহা গলায় বাঁধিয়া দেয়; উহা কস্মিকালেও ত্যাগ করিবার জো নাই; এই পবিত্র যজ্ঞসূত্র ব্রাহ্মণের জীবন-মরণের সাথী। উহাদের ললাটদেশে, গভীর কৃষ্ণবর্ণ নেত্রদ্বয়ের মাঝখানে স্বকীয় ইষ্টদেবতার সাঙ্কেতিক নাম অঙ্কিত থাকে, ধর্ম্মানুষ্ঠানের অঙ্গস্বরূপ এই চিহ্নটি প্রতিদিন প্রাতঃস্নানের পরে উহাদিগকে নুতন করিয়া সযত্নে ললাটে অঙ্কিত করিতে হয়। একটা লাল ফোঁটা ও তিনটা শাদা রেখা—ইহাই শৈবদিগের সাম্প্রদায়িক চিহ্ন; বৈষ্ণবদিগের একপ্রকার শাদা ও লাল রঙের ত্রিশূলরেখা, যাহা ভ্রূদ্বয়ের মধ্যস্থল হইতে আরম্ভ করিয়া কেশ পর্য্যন্ত উথিত হয়। এই সাঙ্কেতিক চিহুগুলি আমাদিগের নিকটে নিতান্তই একটা প্রহেলিকা।

 স্ত্রীলোক খুব অল্প কিংবা নাই বলিলেই হয়—যদিও প্রথমদৃষ্টিতে, গ্রন্থিবদ্ধ বা স্কন্ধের উপরে বিলম্বিত সুচিক্কণ দীর্ঘ কেশগুচ্ছ দেখিয়া পুরুষদিগকে স্ত্রীলোক বলিয়া সর্ব্বত্রই ভ্রম হয়। যে সকল স্ত্রীলোক দেখা যায়, তাও আবার অতি নীচবর্ণের-তাহাদের মুখশ্রী রাস্তার মজুরবমণীদিগের ন্যায় নিতান্ত ইতরধরণের। অবশ্য ব্রাহ্মণদিগের পত্নী ও কন্যাগণ এই পবিত্র গণ্ডির মধ্যে বাস করে। সন্ধ্যার সময় উহারা দলে দলে চাবিদিকে ঘুরিয়া বেড়ায়।

 এই সমস্ত বাড়ী,—যাহা গতরাত্রে, নীলাভ-প্রশান্ত-কিরণ তলে, নিদ্রামগ্ন ও নিমীলিতনেত্র বলিয়া মনে হইয়াছিল—এক্ষণে উহা জীবন-উদ্যমে পূর্ণ। এখন উহাতে বাজার বসিয়াছে; ফল, শস্য-দানা, রঙিন ফুলের ছাপ-দেওয়া মিহি কাপড়; সোনার মত ঝকঝকে পিতলের সামগ্রী:— এই পিতলের সামগ্রীর মধ্যে, বহুলবিশিষ্ট পাতলা-গঠনের প্রদীপ—খুব উচ্চ পায়ার উপর বসানো-(যেরূপ ‘পম্পে’তে দেখিতে পাওয়া যায়); বিবিধপ্রকার পূজার বাসন ও পাত্র, এবং হস্তীর উপর আরূঢ় দেবদেবীর মূর্তি।