পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৬৮
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

মধ্যে, প্রচ্ছন্নপ্রায় রমণীগণ দাঁড়াইয়া আছে। এবং সকলে মিলিয়া দীর্ঘস্বরে চীৎকার করিয়া মুহুর্মুহু কি-একপ্রকার শব্দ করিয়া উঠিতেছে। কতকগুলি বালক ঘাসের আগুন জ্বালাইয়া ক্রমাগত উস্কাইতেছে; আর বাদকেরা মধ্যে মধ্যে আসিয়া তাহাদের বাদ্যযন্ত্রগুলি সেই আগুনের উপর সঞ্চালিত করিয়া, যথোপযুক্ত শব্দ বাহির করিবার জন্য, তাতাইয়া লইতেছে। পুরোহিতের উন্মত্ত উচ্ছসি উত্তরোত্তর বর্ধিত হইতে লাগিল;—ক্রমে সে ভূতাবিষ্ট হইল। সে বিকট চীৎকার করিয়া, বৃক্ষের উপর—প্রস্তরের উপর মাথা ঠুকিতে উদ্যত হইল; লোকেরা চারিদিকে শৃঙ্খলের ন্যায় বাহুবেষ্টন করিয়া তাহাকে আটকাইয়া রাখিল; তাহার পরেই সে অবসন্ন স্পন্দহীন হইয়া মূৰ্ছিত হইল; কণ্ঠ হইতে ঘর্ঘর শব্দ বাহির হইতে লাগিল।•••

 এই দেবতা—যিনি আমাদের হইতে বহুদূরে—যাহাকে এখানকার লোকেরা ঘোর বাদ্যধ্বনি-সহকারে পূজা করিতেছেন-ইনি রহস্যময় ব্রাহ্মণদিগের দেবতারই রূপান্তরমাত্র,—সেই দেবতা, যাঁহাকে ব্রাহ্মণেরা মন্দিরের নিভৃতকক্ষে আধ্যাত্মিকভাবে আরাধনা করিয়া থাকেন।

 আমরা যে-দেবতাকে ভজনা করি—তিনি সেই দেবতারই রূপান্তর- মাত্র...কেন না, ব্রহ্ম, জিহোবা, আল্লা—যে নামেই অভিহিত হউন না, “মিথ্যা-দেবতা” কেহই নাই। যে তত্ত্বজ্ঞানীরা অভিমান করেন—কেবল তাঁহাদের দেবতাই সত্য, তাহাদের বৃথা-গর্ব্ব শিশুজনোচিত বলিয়া আমার মনে হয়। আসল কথা, সেই অপরিমেয় অনধিগম্য পুরুষ আমাদের জ্ঞানকে এতদূর অতিক্রম করেন যে, আমরা তাঁহার স্বরূপসম্বন্ধে যে-কোন ধারণাই করি না কেন, তাহাতে ভ্রান্তি হইবার কথা; একটু কম ভ্রম হইল, কি একটু বেশি ভ্রম হইল, তাহাতে কিছুই আসে যায়-না। যাহারা জীবন-মৃত্যুর কষ্টবন্ত্রণায় আর্ত্তনাদ করিতে করিতে অরণ্যের একটা হীনবিগ্রহের পদতলে প্রার্থনা করে—যতই তাঁহারা