পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৭৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৭০
ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ।

একটু বাতাস উঠিলেই বিলুপ্ত হয়—অথবা মানুষের, ছাগলের, কুকুরের, কাকের পদসঞ্চারে মুছিয়া যায়। অগ্রে তাহারা একটু একটু চিহ্ণ দিয়া রাখে,—পরে সেই চিহ্ণ-অনুসারে খুব তাড়াতাড়ি নক্সাগুলি রচনা করে। অতীব শোভনভাবে আনত হইয়া, গুড়ার আধারপাত্রটি হস্তে লইয়া, মাটির উপর ঘুরিয়া ফিরিয়া দ্রুতভাবে বেড়াইতে থাকে। সেই চূর্ণপাত্র হইতে শাদা-শাদা চূর্ণধারা, অফুরন্ত ফিতার ন্যায় অনবরত পড়িতে থাকে। গোলাপপাপড়ির অনুকরণে জটিল নকসা, জ্যামিতিক আকৃতির চিত্রাবলী, উহাদের নিপুণ অঙ্গুলি হইতে আশ্চর্য্যরূপে বাহির হইতে থাকে। নকসা- রচনা শেষ হইলে, অঙ্কিত রেজালের প্রধান-প্রধান সন্ধিস্থলে উহারা নানাবিধ পুষ্প বসাইয়া দেয়। এইরূপে, সেই ছোট রাস্তার এক প্রান্ত হইতে অপর প্রান্ত পর্যন্ত বিভূষিত হইলে, অন্তত ঘণ্টাখানেকের জন্য মনে হয়, যেন একটা চিত্র বিচিত্র অদ্ভুত গালিচায় রাস্তাটি আচ্ছাদিত হইয়াছে।

 তা ছাড়া, এই অঞ্চলটির সর্বত্রই কেমন-একটা প্রাচীনধরণের শোভন পারিপাট্য, বিমল শান্তি ও সরল গাম্ভীর্য্য বিরাজমান।

 মহারাণীর উদ্যানের সিংহদ্বারের সম্মুখে, সেই একইধরণের কায়দাদুরস্ত লালপাগড়িওয়ালা সিপাই-সান্ত্রী। উহারা তূরীভেরী বাজাইয়া, অস্ত্রশস্ত্র স্কন্ধ হইতে নামাইয়া, উচিত সম্মানপ্রদর্শনে সতত তৎপর। মহারাণীর পতি রাজা, বহিঃসোপানের নিম্নতলে, চাতালে নামিয়া-আসিয়া, বিশিষ্ট শিষ্টতার সহিত পূর্ণ উপচারে আমাকে অভ্যর্থনা করিলেন। মহারাজের ন্যায় ইনিও সুরুচির অনুসরণ করিয়া, ভারতীয় বেশেই আসিয়াছিলেন। সবুজরঙ্গের মখমলের পোষাক, মাথায় শাদা রেশমের পাগড়ি, আর সর্বাঙ্গে হীরক ঝকমক করিতেছে। এই সমস্ত বেশভূষা সত্ত্বেও ইনি একজন কৃতবিদ্য পণ্ডিত।

 প্রাসাদের প্রথমতলস্থ দরবারশালায় মহারাণী আমাকে অভ্যর্থনা