পাতা:ইংরাজ-বর্জ্জিত ভারতবর্ষ - জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুর.pdf/৯১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ত্রিবঙ্কুর-রাজ্যে।
৮৭

 একটা বৃহৎ সোপান জলের মধ্যে নাবিয়া গিয়াছে; অদূরে শাদা-শাদা স্তম্ভশ্রেণী দৃষ্ট হইতেছে। ঐ গৃহে অনেকদিন কেই বাস করে নাই। শুনিলাম, দেওয়ানের আদেশক্রমে ঐখানেই আমাদের জন্য সান্ধ্যভোজের আয়োজন হইয়াছে। রাত্রির প্রারম্ভেই, আমরা ঐ বাটীতে উঠিলাম। উঠিবামাত্র, ঐ শুভ্রগৃহের ন্যায়—শুভ্রবসনধারী ভারতীয় ভৃত্যগণ সোপানপংক্তির উপর দৌড়িয়া আসিল এবং স্বাগত-অভ্যর্থনা করিয়া রূপার থালায় রক্ষিত একটা ফুলের তোড়া আমাকে উপহার দিল। দুইএকঘণ্টাকাল মাত্র এখানে আমার থাকিবার কথা। ততক্ষণ আমার মাঝিমাল্লারা বিশ্রাম করিতে পাইবে।

 সান্ধ্যভোজের পর, এই বিজন উদ্যানে বসিয়া চিন্তা করা ভিন্ন আমার আর কোন কাজ নাই। মনে হয় যেন, ফ্রান্‌সের একটা পুরাতন উদ্যানে আসিয়া পড়িয়াছি।

 উদ্যানটির একটু “পোড়ো” অবস্থা; ইহার সরু পথগুলির ধারে-ধারে বঙ্গদেশীয় গোলাপগুল্ম। আমার সম্মুখে; অস্তাচলদিগন্তে, নির্ব্বাপিতরশ্মি নভোদেশ এখনো তামসী রক্তিমা ধারণ করিয়া আছে—সেই ম্লানাভ আলোকচ্ছটা যাহা অম্মদ্দেশের উষ্ণতম গ্রীষ্মসন্ধ্যায় কখন-কখন পরিলক্ষিত হয়।

 এই শান্তিময় নিস্তব্ধতার মধ্যে, শৈশবের চিরাভ্যস্ত ও সুমধুর স্মৃতির আবেশ আসিয়া আমার চিত্তকে অধিকার করিল;—তখন,—সর্ব্বসময়ে ও সর্ব্বত্র আমি প্রায় যাহা করিয়া থাকি, এখন তাহাই করিলাম;—এই স্মৃতির প্রবাহ-মুখে আপনাকে একেবারে ছাড়িয়া দিলাম। এই বিষাদময় স্মৃতি লইয়া আমি যদৃচ্ছাক্রমে আত্মবিনোদন করিতে পারি—তাহাতে কিছুমাত্র আমার ক্লান্তি হয় না।…বনবেষ্টিত “পোড়া”-ধরণের এই উদ্যানের ন্যায়, স্বদেশের কোন-একটি উদ্যানে, প্রকৃতির ভাব আমার মনে সর্ব্বপ্রথমে প্রতিভাত হয়; এবং আমাদের সেই সমতল-দিগন্তপ্রদেশে, অগষ্ট ও