দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ : শ্বশুরবাড়ী চলিলাম o তাই চক্ষে একটু একটু জল আসিয়াছিল। রাত্রিতে আমি ভাল করিয়ু দেখিতে পাইব না, তিনি কেমন। রাত্রিতে ত তিনি ভাল করিয়া দেখিতে পাইবেন না, আমি কেমন । মা বহু যত্নে চুল বাধিয়া দিয়াছিলেন—দশ ক্রোশ পথ যাইতে যাইতে খোপা খসিয়া যাইবে, চুল সব স্থানচ্যুত হইয়া যাইবে। পান্ধীর ভিতর ঘামিয়া বিঞ্জ হইয়া যাইব। তৃষ্ণায় মুখের তাম্বুলরাগ শুকাইয়া উঠিবে, শ্রান্তিতে শরীর হতশ্রী হইয়া যাইবে । তোমরা হাসিতেচ্ছ ? আমার মাথার দিব্য হাসিও না, আমি ভয়া যৌবনে প্রথম শ্বশুরবাড়ী যাইতেছিলাম। পথে কালাদীঘি নামে এক বৃহৎ দীর্ঘিকা আছে। তাহার জল প্রায় অৰ্দ্ধ ক্রোশ । পাড় পর্ব্বতের ন্তায় উচ্চ । তাহার ভিতর দিয়া পথ। চারি পার্থে বটগাছ। তাহার ছায়। শীতল, দীঘির জল নীল মেঘের মত, দৃশু অতি মনোহর। তথায় মনুষের সমাগম বিরল। ঘাটের উপরে একখানি দোকান আছে মাত্র । নিকটে যে গ্রাম আছে, তাহারও নাম কালাদীঘি। - এই দীঘিতে লোকে একা আসিতে তয় করিত। দম্যতার ভয়ে এখানে দলবদ্ধ না . হইয়া লোক আসিত না । এই জন্য লোকে “ডাকাতে কাল দীঘি” বলিত। দোকানদারকে লোকে দস্থ্যদিগের সহায় বলিত। আমার সে সকল ভয় ছিল না। আমার সঙ্গে অনেক লোক—ষোল জন বাহক, চারি জন দ্বারবান, এবং অন্যান্ত লোক ছিল । যখন আমরা এইখানে পৌছিলাম, তখন বেলা আড়াই প্রহর। বাহকের বলিল যে, “আমরা কিছু জল-টল না খাইলে আর যাইতে পারি না।” দ্বারবানের বারণ করিলবলিল, “এ স্থান ভাল নয়।” বাহকের উত্তর করিল, “আমরা এত লোক আছি— আমাদিগের ভয় কি ?’ আমার সঙ্গের লোকজন ততক্ষণ কেহই কিছুই খায় নাই। শেষে সকলেই বাহকদিগের মতে মত করিল। দীঘির ঘাটে—বটতলায় আমার পান্ধী নামাইল । আমি হাড়ে জ্বলিয়া গেলাম । কোথায়, কেবল ঠাকুর দেবতার কাছে মানিতেছি, শীঘ্র পৌছি—কোথায় বেহার পান্ধী নামাইয়া হাটু উচু করিয়া ময়লা গামছা মুরাইয়া বাতাস খাইতে লাগিল। কিন্তু ছি। স্ত্রীজাতি বড় আপনার বুঝে। আমি যাইতেছি কাধে, তাহার কাধে আমাকে বহিতেছে ; আমি যাইতেছি ভরা যৌবনে স্বামিসন্দর্শনে—তারা যাইতেছে খালি পেটে এক মুঠ ভাতের সন্ধানে ; তারা একটু ময়লা গামছা ঘুরাইয়া বাতাস খাইতেছে বলিয়া কি আমার রাগ হইল । ধিক্ ভরা যৌবনে । -- - -
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১১
অবয়ব