$9 हैमिलव्र কেহ কড়িয়া লইয়াছে ?” আমি বলিলাম, “আজ্ঞা হুঁ ৷” তিনি যজমানদিগের নিকট অনেক কাপড় পাইতেন—ছুইখানা খাটে। বহরের চৌড় রাঙ্গাপেড়ে সাড়ী আমাকে পরিতে দিলেন। শাকার কড়ও তার ঘরে ছিল, তাহাও চাহিয়া লইয়া পরিলাম। এ সকল কার্য্য সমাধা করিলাম—অতি কষ্টে । শরীর ভাঙ্গিয়া পড়িতেছিল। ব্রাহ্মণ ঠাকুরাণী ফুটি ভাত দিলেন—খাইলাম। একটা মাত্র দিলেন, পাতিয়া শুইলাম। কিন্তু এত কষ্টেও ঘুমাইলাম না। আমি যে জন্মের মত গিয়াছি—আমার যে মরাই ভাল ছিল, , কেবল তাহাই মনে পড়িতে লাগিল। ঘুম হইল না। প্রভাতে একটু ঘুম আসিল। আবার একটা স্বপ্ন দেখিলাম। দেখিলাম, সম্মুখে অন্ধকারময় যমমূর্ত্তি, বিকট দংষ্ট্রারাশি প্রকটিত করিয়া হাসিতেছে। আর ঘুমাইলাম না। পরদিন প্রাতে উঠিয়া দেখিলাম যে, আমার অত্যন্ত গা বেদন হইয়াছে। পা ফুলিয়া উঠিয়াছে, বসিবার শক্তি নাই । - যত দিন না গায়ের বেদনা আরাম হইল, তত দিন আমাকে কাজে কাজেই ব্রাহ্মণের গৃহে থাকিতে হইল। ব্রাহ্মণ ও র্তাহার গৃহিণী আমাকে যত্ন করিয়া রাখিলেন। কিন্তু মহেশপুর যাইবার কোন উপায় দেখিলাম না। কোন স্ত্রীলোকই পথ চিনিত ন, অথবা যাইতে স্বীকার করিল না । পুরুষে অনেকেই স্বীকৃত হইল—কিন্তু তাহাদিগের সঙ্গে একাকিনী যাইতে ভয় করিতে লাগিল । ব্রাহ্মণও নিষেধ করিলেন। বলিলেন, “উহাদিগের চরিত্র ভাল নহে, উহাদিগের সঙ্গে যাইও না । উহাদের কি মতলব বলা যায় না। আমি ভদ্রসন্তান হইয়া তোমার স্তায় মুন্দরীকে পুরুষের সঙ্গে কোথাও পাঠাইতে পারি ন! • সুতরাং আমি নিরস্ত হইলাম । - এক দিন শুনিলাম যে, ঐ গ্রামের কৃষ্ণদাস বস্তু নামক এক জন ভদ্রলোক সপরিবারে কলিকাতায় যাইবেন । শুনিয়া আমি উত্তম সুযোগ বিবেচনা করিলাম। কলিকাতা হইতে আমার পিত্রালয় ও শ্বশুরালয় অনেক দূর বটে, কিন্তু সেখানে আমার জ্ঞাতি খুল্লতাত বিষয়কর্ম্মোপলক্ষে বাস করিতেন। আমি ভাবিলাম যে, কলিকাতায় গেলে অবশু খুল্লতাতের সন্ধান পাইব। তিনি অবশু আমাকে পিত্রালয়ে পাঠাইয়া দিবেন। না হয় আমার পিতাকে সংবাদ দিবেন। আমি এই কথা ব্রাহ্মণকে জানাইলাম। ব্রাহ্মণ বলিলেন, “এ উত্তম বিবেচনা করিয়াছ। কৃষ্ণদাস বাবু আমার যজমান। সঙ্গে করিয়া লইয়া বলিয়া দিয়া আসিৰ। তিনি প্রাচীন, আর বড় ভাল মানুষ।” - -
পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৮
অবয়ব