পাতা:ইন্দিরা-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ ঃ বাজিয়ে যাব মল $4 ব্রাহ্মণ আমাকে কৃষ্ণদাস বাবুর কাছে লইয়া গেলেন। ব্রাহ্মণ কহিলেন, “এটি ভালোকের কন্য, বিপাকে পড়িয়া পথ হারাইয়া এ দেশে আসিয়া পড়িয়াছেন। আপনি যদি ইহাকে সঙ্গে করিয়া কলিকাতায় লইয়া যান, তবে এ অনাথ আপন পিত্রালয়ে পহুছিতে পারে।” কৃষ্ণদাস বাবু সন্মত হইলেন। আমি তাহার অন্তঃপুরে গেলাম। পরদিন তাহার পরিবারস্থ স্ত্রীলোকদিগের সঙ্গে, বস্ব মহাশয়ের পরিবার কর্তৃক অনাদৃত হইয়াও, কলিকাতায় যাত্রা করিলাম। প্রথম দিন, চারি পাচ ক্রোশ হাটিয়া গঙ্গাতীরে অসিতে হইল। পরদিন নৌকায় উঠিলাম। পঞ্চম পরিচ্ছেদ বাজিয়ে যাব মল আমি গঙ্গণ কখনও দেখি নাই। এখন গঙ্গা দেখিয়া, আহলাদে প্রাণ ভরিয়া গেল। আমার এত দুঃখ, মুহূর্ত্ত জন্য সব ভুলিলাম। গঙ্গার প্রশস্ত হৃদয় । তাহাতে ছোট ছোট ঢেউ—ছোট ঢেউর উপর রৌদ্রের চিকিমিকি—যত দূর চক্ষু যায়,তত দূর জল জলিতে জ্বলিতে ছুটিয়াছে—তীরে কুঞ্জের মত সাজান বৃক্ষের অনস্ত শ্রেণী ; জলে কত রকমের কত নৌকা ; জলের উপর দাড়ের শব্দ, দাড়ি মাঝির শব্দ, জলের উপর কোলাহল, তীরে ঘাটে ঘাটে কোলাহল ; কত রকমের লোক, কত রকমে স্নান করিতেছে । আবার কোথাও সাদা মেঘের মত অসীম সৈকত ভূমি—তাতে কত প্রকারের পক্ষী কত শব্দ করিতেছে। গঙ্গ যথার্থ পুণ্যময়ী । অতৃপ্ত নয়নে কয় দিন দেখিতে দেখিতে আসিলাম । যে দিন কলিকাতায় পৌছিব, তাহার পূর্বদিন, সন্ধ্যার কিছু পূর্বে জোয়ার আসিল। নৌকা আর গেল না। একখানা ভদ্র গ্রামের একটা বাধা ঘাটের নিকট আমাদের নৌকা লাগাইয়। রাখিল । কত সুন্দর জিনিস দেখিলাম ; জেলেরা মোচার খোলার মত ডিঙ্গীতে মাছ ধরিতেছে, দেখিলাম। ব্রাহ্মণ পণ্ডিত ঘাটের রাণায় বসিয়া শাস্ত্রীয় বিচার করিতেছেন, দেখিলাম। কত সুন্দরী, বেশভূষা করিয়৷ জল, লইতে আসিল । কেহ জল ফেলে, কেহ কলসী পুরে, কেহ আবার ঢালে, আবার পুরে, আর হাসে, গল্প করে, আবার ফেলে, আবার কলসী ভরে। দেখিয়৷ আমার প্রাচীন গীতটি মনে পড়িল, একা কঁাকে কুম্ভ করি, কলসীতে জল ভরি, জলের ভিতরে শু্যামরায় ।