পাতা:উপেন্দ্রকিশোর রচনাসমগ্র.djvu/১০১৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
বিবিধ প্রবন্ধ
১০১৩

হয় না।

 বৎসরে মধ্যে শরৎকালটি এখানে সকলের চেয়ে সুন্দর, তখন আকাশ পরিষ্কার থাকে আর হিমালয়ের অতি চমৎকার শোভা হয়। কিন্তু তার কথা আরেক দিন বলব।

 যত উঁচুতে ওঠা যায়, ততই শীত। কলকাতার চেয়ে দার্জিলিঙে বেশি শীত, আবার দার্জিলিঙের চেয়ে হিমালয় পর্বতের উপবে বেশি শীত। সেখানে বারো মাসই বরফ পড়ে থাকে, তাই সেসব পাহাড় দেখতে সাদা।

 অবশ্য দার্জিলিঙও হিমালয়ের উপরে, কিন্তু তত উঁচুতে নয়। আগে কতকগুলো ছোটছোট পাহাড় পার হয়ে তবে হিমালয়ে পৌঁছাতে হয়। দার্জিলিঙ সেই ছোট পাহাড়ের উপরে। এগুলোকে বলে উপ-হিমালয়। দার্জিলিং থেকে উত্তরদিকে তাকালে হিমালয় যে কি সুন্দর দেখা যায়, কি বলব। এত উঁচু পাহাড় পৃথিবীতে আর কোথাও নাই:এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সারবাঁধা এতগুলো বিশাল পর্বতও আর কোথাও দেখতে পাওয়া যায় না। নীচের দিকে তাকাও, রঙ্গিত নদী দেখতে পাবে, সে প্রায় বাংলার মাঠের সমানই নিচু। উপরের দিকে তাকাও, দেখবে হিমালয় চূড়াগুলি যেন আকাশের গায়ে ঠেকে আছে তার সকলের চেয়ে উচুটি পাঁচ মাইলেরও বেশি উঁচু। রঙ্গিতের ধারে প্রায় আমাদের এখানের মতনই গরম, আর হিমালয়ের উপরে ভয়ংকর ঠাণ্ডা। সেখানে আজও কেউ যেতে পারে নি, যদিও অনেক চেষ্টা করছে। গাছপালা সেখানে জন্মায় না, খুব উপরে জীবজন্তু থাকবার জো নাই।

 এত উঁচুতে বাতাস এমন হাল্কা যে নাক দিয়ে ভালো করে নিশ্বাস ফেলাই কঠিন। কুড়ি হাজার ফুট উঁচুতে গেলেই হাঁপ ধরে অস্থির করে দেয়;কাঞ্চনজঙ্ঘার উপরে গেলে কেমন হবে, তা তো কেউ বলতেই পারে না। কাঞ্চনজঙ্ঘা হচ্ছে দার্জিলিঙের ওখানকার সবচেয়ে উঁচু পর্বত, ২৮১৫৬ ফুট উঁচু, তারপর জানু, ২৫৩০৪ ফুট, তারপর কব্রু, প্রায় ২৪০০০ ফুট, তারপর পণ্ডিম, ২২০১৭ ফুট, তারপর নর্সিং, ১৮১৪৫ ফুট। এমনি করে পরপর কত যে দাঁড়িয়ে আছে, আমি তা বলে শেষ করতে পারব না। আর এই বুড়া বয়সে তাদের সব কটার নাম মুখস্থ করতে গেলে আমার প্রাণই বেরিয়ে যাবে।

 আমরা বলি কাঞ্চনজঙ্খা, কিন্তু আসলে নাকি সেটা বাংলা কথা নয়। আসল কথাটি হচ্ছে ‘খাচেন-ঝ-ঙ্গা। তার মানে বলছি, শুন। খাচেন’ কিনা বড্ড হিম; ঝ’ মানে পাঁচ;আর ‘ঙ্গ’ হচ্চে পর্বত।

 অর্থাৎ কিনা পাঁচটি পর্বত মিলে ঐ পর্বতটি হয়েছে আর সেখানে বড় হিম। এ কথা আমি একটি পুস্তকে পড়েছিলাম, সুতরাং সত্য হওয়া আশ্চর্য নয়।

 হিমালয়ের আরেকটা চূড়া আছে সে কাঞ্চনজঙ্ঘার চেয়েও উঁচু। তোমরা অনেকেই তার নাম শুনেছ। ইংরাজরা তাকে বলে এভারেস্ট, দেশী লোকেরা বলে গৌরীশঙ্কর, পাহাড়ীরা নাকি বলে ধেও-গঙ্গা। তার মানে যে কি, সে কথা আমি বলতে পারব না। আরেকটু হলেই এই পর্বতটি দার্জিলিং থেকে দেখা যেত। সিঞ্চল থেকে তার আগা দেখতে পাওয়া যায়।

 এতগুলো বড় বড় পর্বত এক জায়গায় থাকার একটু অসুবিধা আছে। এ বলে, আমাকে দেখ। ও বলে, আমাকে দেখ।’ কাজেই ওরা যে বাস্তবিকই কত বড়, সে কথা চট করে