ব্যক্তি বাঁচিয়া থাকিতে আপনার রাজসূয় হওয়া অসম্ভব। ইহাকে আগে মারিয়া বন্দী রাজাদিগকে ছড়াইয়া দিতে চেষ্টা করুন, নহিলে রাজসূয় করিতে পারিবেন না৷”
যুধিষ্ঠির বলিলেন, “এই জরাসন্ধকে লইয়া তো বড় মুস্কিল দেখিতেছি তুমি নিজে উহাকে এত ভয় কর, আমাদের সাহস কিসে হইবে? তুমি, বলরাম, ভীম আর অর্জুন, এই চারিজনের কেহ কি উহাকে মারিতে পার না?”
ইহা শুনিয়া ভীম বলিলেন, “কৃষ্ণের বুদ্ধি আছে, আমার বল আছে, আর অর্জুনের সাহস আছে। আমরা তিনজনে মিলিয়া জরাসন্ধ কে বধ করিব৷”
কৃষ্ণ বলিলেন, “জরাসন্ধ ছিয়াশিটি বড়-বড় রাজাকে আনিয়া ছাগলের মতো বাঁধিয়া রাখিয়াছে। আর চৌদ্দটিকে আনিতে পারিলেই একশতটি হয় তখন উহাদিগকে বলি দিবে। এইসকল রাজাকে ছাড়াইতে চেষ্টা করা উচিত হইতেছে। যে জরাসন্ধকে মারিয়া এ কাজ করিতে পারিবে, সে সম্রাট হইতে পারিবে, তাহাতে সন্দেহ নাই৷”
যুধিষ্ঠির বলিলেন, “আমি সম্রাট হওয়ার লোভে তোমাদিগকে এমন বিপদে ফেলিতে পারিব না। আমার রাজসূয়ে কাজ নাই৷”
এই সময়ে অর্জুন সেখানে আসিলেন। তিনি বলিলেন, “আমরা ভালো ভালো অস্ত্র পাইয়াছি, আমাদের বলও যথেষ্ট আছে। এ-সব থাকিতে শত্রুর সামনে চুপ করিয়া থাকা ভালো নহে। আমরা যুদ্ধ করিব৷”
জরাসন্ধ মগধের রাজা, উহার পিতার নাম বৃহদ্রথ। বৃহদ্রথের দুই রানী ছিলেন। অনেকদিন পর্যন্ত উঁহাদের সন্তান না হওয়ায় রাজার মনে বড় দুঃখ ছিল। ইহার মধ্যে একদিন মহর্ষি চণ্ডকৌশিক রাজবাড়ির নিকটে এক আম গাছের তলায় বসিয়া বিশ্রাম করিতেছিলেন। এ কথা শুনিবামাত্র রাজা মুনির নিকটে গিয়া তাঁহার অনেক সেবাপূর্বক নিজের দুঃখের কথা জানাইলেন। তখন মুনি ধ্যানে বসিতেই গাছ হইতে একটি সুন্দর আম তাঁহার কোলের উপর পড়িল। সেই আমটি রাজাকে দিয়া তিনি বলিলেন, “মহারাজ, রানীরা এই আম খাইলেই তোমার পুত্র হইবে৷”
দুই রানী সেই আমটিকে ভাগ করিয়া খাইলেন। ইহাতে তাঁহাদের দুজনের দুটি ছেলে হইল বটে, কিন্তু সে অতি অদ্ভুতরকমের ছেলে। তাহাদিগকে মানুষ বলা যায় না, আধখানা মানুষ বলিতে হয়। একখানা করিয়া পা, একটি মাত্র হাত, একটি চোখ, একটি কান, আধখানি মাথা, আধখানি শরীব। এমন ছেলে দিয়া কি হইবে? কাজেই তাহাদিগকে কাপড়ে মুড়িয়া চৌমাথায় ফেলিয়া দেওয়া হইল৷
জরা নামে এক রাক্ষসী সেই দুইখানি অর্ধেক ছেলে কুড়াইয়া পায়। রাক্ষসী ভাবিল, দুটাকে এক সঙ্গে জড়াইয়া লইলে বহিবার সুবিধা হইবে। এই ভাবিয়া যেই সে দুই অর্ধেক একত্র করিয়াছে, অমনি তাহা জুড়িয়া একটি ছেলে হইয়া গেল। বক্সের মতো শক্ত প্রকাণ্ড খোকা, রাক্ষসী তাহাকে কি সহজে বহিয়া নিতে পারে? সে খোকা আস্ত হইয়াই হাতের মুঠি মুখে ঢুকাইয়া ষাঁড়ের মতো চ্যাঁচাইতে আরম্ভ করিল৷
খোকার সেই ভয়ংকর চিৎকার শুনিয়া রাজা, মন্ত্রী, লোকজন সকলে সেখানে ছুটিয়া আসিল। রাক্ষসীও ছেলেটি অমনি রাজাকে দিয়া বলিল, “এই নাও, তোমার ছেলে৷”
সেই ছেলেই জরাসন্ধ (অর্থাৎ জরা যাহাকে জুড়িয়াছিল)। বড় হইয়া সেই বড়ই