এ কথায় জরাসন্ধ আশ্চর্য হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “আমি কি করিয়া আপনাদের শত্রু হইলাম তাহা তো বুঝিতে পারিতেছি না। আপনাদের বোধহয় ভুল হইয়া থাকিবে।”
কৃষ্ণ বলিলেন, “তুমি ক্ষত্রিয় রাজাদিগকে ধরিয়া বলি দিতে আনিয়াছ, সুতরাং তুমি সকল ক্ষত্রিয়েরই শত্রু। তাই তোমাকে বধ করিতে আসিয়াছি। আমরা ব্রাহ্মণ নহি! আমি বসুদেবের পুত্র কৃষ্ণ, আর ইঁহারা দুজন মহারাজ পাণ্ডুর পুত্র। এখন, হয় এই সকল রাজাদিগকে ছাড়িয়া দাও, না হয় আমাদের সহিত যুদ্ধ করিয়া যমের বাড়ি যাও৷”
জরাসন্ধ বলিল, “আমি যাহাদিগকে ধরিয়া আনিয়াছি, তাহাদিগকে লইয়া আমার যাহা খুশি করিব। আমি কাহাকেও ভয় করি না। আমি একেলা দুই তিন মহারথীর (খুব বড় বীরের) সহিত যুদ্ধ করিতে পারি৷”
কৃষ্ণ বলিলেন, “আমাদের কাহার সহিত যুদ্ধ করিবে?”
জরাসন্ধ ভীমকে দেখাইয়া বলিল, “ইহার সহিত৷”
তখন পুরোহিত আসিয়া স্বস্ত্যয়ন (জরাসন্ধের মঙ্গলের জন্য দেবতার পূজা) করিলে, জরাসন্ধ বর্ম আঁটিয়া, চুল বাঁধিয়া, বলিল, “আইস ভীম! যুদ্ধ করি৷”
তারপর দুজনে কি ভয়ানক যুদ্ধই আরম্ভ হইল! যতরকম কুস্তির প্যাঁচ আছে, সমস্তই দুজন দুজনের উপর খাটাইলেন। ঝড়ের মতন করিয়া তাঁহাদের নিশ্বাস বহিতে লাগিল, কপালে কপালে ঠেকিয়া আগুন বাহির হইতে লাগিল৷
তেরো দিন এইরূপ যুদ্ধের পর চৌদ্দ দিনের রাত্রিতে জরাসন্ধ ক্লান্ত হইয়া পড়িল। তাহা দেখিয়া কৃষ্ণ বলিলেন “আহা! বড় কাহিল হইয়া পড়িয়াছ! ভীম, আর মারিও না, তাহা হইলে মরিয়া যাইবে!
আসল কথা ভীমকে জানাইয়া দেওয়া যে জরাসন্ধ কাহিল হইয়াছে। তাহা বুঝিতে পারিয়া ভীম বলিলেন, “হতভাগা এমনি কাপড় জড়াইয়াছে যে উহাকে বধ করা কঠিন দেখিতেছি।”
কৃষ্ণ বলিলেন, “তোমার জোর একবার ভালো করিয়া দেখাও না৷”
তখন ভীম আগে জরাসন্ধ কে শূন্যে তুলিয়া একশত পাক ঘুরাইলেন। তারপর হাঁটু দিয়া তাহার পিঠ ভাঙ্গিলেন। শেষে দুই পা ধরিয়া তাহাকে দুই ভাগে চিরিয়া ফেললেন। সে সময়ে জরাসন্ধের চিৎকারে অতি অল্প লোকই টিকিয়া থাকিতে পারিয়াছিল৷
আর সেই বন্দী রাজাদের কথা কি বলিব? তাঁহারা দারুণ অপমান আর মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত, ইহার মধ্যে হঠাৎ তাঁহাদের সকল দুঃখ দূর হইয়া গেল। তাহারা কৃষ্ণ, ভীম আর অর্জুনের অশেষ স্তুতি করিয়া জোড়হাতে বলিলেন, “এখন আপনাদের এই ভৃত্যেরা আপনাদের কি সেবা করিবে, অনুমতি করুন৷”
কৃষ্ণ বলিলেন, “মহারাজ যুধিষ্ঠির রাজসূয় যজ্ঞ করিতে চাহেন, আপনারা অনুগ্রহ করিয়া তাহাতে সাহায্য করিবেন৷”
রাজারা পরম আনন্দের সহিত এ কথায় সম্মত হইলেন। জরাসন্ধের পুত্র সহদেব কৃষ্ণ আর ভীমার্জুনকে বিস্তর ধনরত্ন উপহার দিয়া বিনয়ের সহিত বলিলেন,“আমিও যজ্ঞে সাহায্য করিব৷” তাঁহারা তাঁহাকে মগধের সিংহাসনে বসাইয়া ইন্দ্রপ্রস্থে ফিরিলেন৷
তারপর যজ্ঞের আয়োজন আরম্ভ হইল। রাজাদিগের নিকট হইতে কর আনাই প্রথম