পাতা:ঊর্ম্মিমুখর.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রেণু দুবারই এল। আমার কোলের কাছটি ঘেসে দাড়িয়ে বল্লে—আপনি বুধবারে আসবেন তো ? আমি পথের দিকে চেয়ে থাকি, কখন আসবেন। কি সুন্দর মেয়ে ! ছ'বছর পরে খুদ্ধদের ওখান থেকে বেড়িয়ে এসে দুপুর বেলাতে মনে বেশ আনন্দ হ’ল, কারণ পথে পথে নতুন পাতা ওঠা গাছ, কোকিলের ডাক। রাত দশটার পরে জ্যোৎস্না উঠেচে, চেয়ার পেতে বাইরে বসে দেখি আর ভাবি, কাল ঠিক জ্যোৎস্ন উঠতে দেখে মণি আমার সঙ্গে তর্ক করলে যে এটা নাকি শুক্লপক্ষ,—ওদের বাড়ীর ছাদে। তারপর, তিতু আর আমি খয়রামারির মাঠে গেলুম বেড়াতে । বেশ জ্যোৎস্না উঠেচে–পথে ঝোপে ঝাড়ে কত কি ফুলের সুগন্ধ। এই গ্রীষ্মকালে বনঝোপে রাত্রে নানারকম বনফুল ফোটে— তার মধ্যে বনমল্লিকা বেশী। মনে এমন একটা অদ্ভূত আনন্দ ও উত্তেজনা যে মনে হয় খয়রামারির মাঠেই সারারাত বসে থাকি, খুকুর কথা ও রেণুর কথা । যত মনে হয় আর তত আনন্দ বেশী পাই। মাথার ওপরে কেমন নক্ষত্র উঠেচে এই জ্যোৎস্ন রাত্রে সারা বিশ্বের কেন্দ্রস্থলে যে প্রতি ও ভালবাসা উৎসারিত হচ্চে পবিত্র প্রাণের অবলম্বনে তারা আমার জন্তে, তোমার জন্তে সেই প্রতি ভালবাসার কিছু অংশ homely ভাবে পরিবেশন করবে। কতরাত্রে ফিরে এলুম, তবুও ঘুম আসে না। একে গরম, তাতে আনন্দের উচ্ছাস মনের মধ্যে, কি করে ঘুমোই ? জীবনে আজকাল বড় বেশী আনন্দ পাচ্চি, খানিকটা প্রকৃতি থেকে, খানিকটা মানুষের সঙ্গে মামুষের সঙ্গে সম্পর্ক থেকে । নৌকা করে সকালে বারাকপুর যাচ্চি। এ সময়টা আর কখনো ইছামতীতে যাইনি, বর্ষাকালের চেয়ে এখন আরও সবুজ–সত্যিই আরও সবুজ। গাছে গাছে নতুন শোভা । চারিদিকে পাখী ডাকচে পিড়িং পিড়িং, কোকিল ডাকচে, ঠ্যাং উচু করে বকগুলি শেওলার দামে বসে আছে— সিমুল গাছগুলোর রূপ কি অদ্ভুত! সিমুল, আর ষাড়া, বাবলা গাছে নদীর শোভা বাড়িয়েচে । আমি বলে কাগজ দেখচি মেয়েদের, প্রায়ই সব পাশ করিয়ে দিচ্চি—মেয়েদের ফেল করাতে মন সরে না।--আর রেণুর কথা ভাবচি, কাল খুদু বলেছিল বিকেলে—‘আপনার সঙ্গে কথা বলে যেমন অদ্ভূত আনন্দ পাই, এমন আর কারো সঙ্গে কথা বয়ে পাইনে সেই কথা