পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

ভারতের সনাতন তপোভূমি “যেন কোন্ পূর্বজন্মের পরিচয়ে আমাকে কোলে করিয়া লইল।”—হিমালয়ে আসিয়া ইহাই রবীন্দ্রনাথের মনোভাব।

 রবীন্দ্রনাথ তাঁহার আত্মজীবনীতে বলিয়াছেন যে, এখানে আসিবার পর পিতা মহর্ষি গীতার মনোমত শ্লোকগুলি চিহ্নিত করিয়া দিয়াছিলেন এবং সেগুলি “বাংলা অনুবাদ সহ আমাকে কপি করিতে দিয়াছিলেন।” সর্বোপনিষদ দোহন করা গীতার অমৃতরস হইল এখানে বালক রবীন্দ্রনাথের প্রাত্যহিক পানীয়। তারপর তিনি বলিয়াছেন, হিমালয়ে বসিয়া “আর আমি পিতার কাছে স্বয়ং মহর্ষি বাল্মীকির স্বরচিত অনুষ্টুভ ছন্দের রামায়ণ পড়িয়া আসিয়াছি, এই খবরটাতে মাকে সকলের চেয়ে বেশী বিচলিত করিতে পারিয়াছিলাম।” হিমালয়ের আসনে উপবিষ্ট হইয়া এযুগের ঋষিকবি এইভাবেই আদিকবির নিকট কাব্যদীক্ষা গ্রহণ করিয়াছেন। সর্বশেষে তিনি বলিয়াছেন, “প্রায় প্রতিদিনই বিশুদ্ধ উচ্চারণে অনর্গল আবৃত্তি করেছি উপনিষদের শ্লোক।”

 ভিতরে ব্রহ্মসাক্ষাৎকারের বীজ, স্থান ব্রহ্মভূমি হিমালয়, সঙ্গে পিতা মহর্ষি এবং উপনিষদের ব্রহ্মমন্ত্রআবৃত্তি নিত্যকর্ম, বীজের পরিপোষণের পক্ষে শ্রেষ্ঠতম পরিবেশই রবীন্দ্রনাথের ক্ষেত্রে প্রাপ্ত দেখা যাইতেছে। কাজেই তাঁহার ‘মোক্ষোৎপাদক কর্ম সকল’ একটু বিশেষ দ্রুততার সহিতই ফলোন্মুখ হইয়াছে, ইহাও দেখা যাইবে।