পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/১২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

(২)

 আত্মসাক্ষাৎকারের বীজটি লইয়া রবীন্দ্রনাথ জন্মগ্রহণ করিয়াছিলেন, ইহার প্রমাণ আমরা দেখিলাম। অতঃপর ‘মোক্ষোৎপাদক কর্ম সকলের ফলোন্মুখ’ হইবার যে কথা ভগবান বেদব্যাস বলিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথের জীবনে তাহার প্রমাণ অনুসন্ধান করা যাইতেছে।

 রবীন্দ্রনাথের জীবনের আঠারো-ঊনিশ বৎসরের একটি ঘটনাকেই এই সম্পর্কে— প্রথম প্রমাণ বা সাক্ষ্যরূপে গ্রহণ করা যাইতেছে। ঘটনাটি সম্বন্ধে ‘জীবনস্মৃতিতে’ রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন, “এমন সময় আমার মধ্যে হঠাৎ কী একটা উলটপালট হইয়া গেল।” উলট-পালট বলিতে এই জীবনেই নব জন্মান্তর বা আমূল রূপান্তরই তিনি ইঙ্গিত করিয়াছেন।

 বস্তুত এই ঘটনাটিই রবীন্দ্রনাথের জীবনে ব্রহ্মের প্রথম প্রকাশ, তাঁহার জৈব সত্তার উপর হইতে আবরণ উন্মোচন। এই ঘটনাটিই রবীন্দ্রনাথের জীবনে তমসা হইতে জ্যোতিতে প্রথম জাগরণ, অসৎ হইতে সত্যে প্রথম উত্তরণ এবং মৃত্যু হইতে অমৃতে প্রথম আস্বাদন। এই ঘটনাটি ত্যাগ করিলে রবীন্দ্রনাথের ঋষিজীবনীর ভিত্তিটিই অপসৃত হয়।

 ‘জীবন-স্মৃতি’ হইতে ঘটনাটির বিবরণ প্রথম গ্রহণ করা যাইতেছে—

 “যখন বয়স হইয়াছে, হয়তো আঠারো কি ঊনিশ হইবে। একদিন ভোরে উঠিয়া বারান্দায় দাঁড়াইয়া চাহিয়া ছিলাম। তখন সেই গাছগুলির পল্লবান্তরাল হইতে সূর্যোদয় হইতেছিল। হঠাৎ এক মহূর্তের মধ্যে আমার চোখের উপর হইতে যেন একটা পর্দা সরিয়া গেল। দেখিলাম, এক অপরূপ মহিমায় বিশ্বসংসার সমাচ্ছন্ন, আনন্দে এবং সৌন্দর্যে সর্বত্রই তরঙ্গিত। আমার হৃদয়ের স্তরে