পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৪১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৩৭

যায়, বলা হইয়াছে, ‘মনো ইমাং দৈবং চক্ষুং’—মন এই সাধকের দৈবচক্ষু।

 এখানে স্পষ্ট উপদেশ রহিয়াছে যে, চক্ষুরাদি শারীরিক ইন্দ্রিয় ছাড়া মনরূপ এক দৈব চক্ষু আছে, যাহা দ্বারা ব্রহ্মকে দেখা যায়। ছান্দোগ্য যাহাকে দৈবচক্ষু বলিয়াছেন, রবীন্দ্রনাথ তাহাকেই বলিয়াছেন— ধ্যানচক্ষু।

 অপরাপর উপনিষদেও এই একই উপদেশের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়; যাঁহাকে দেখা যায় না, সেই ব্রহ্মকেই দেখার জানার কথা বা উপদেশ আছে। প্রাচীনতম উপনিষদই বৃহদারণ্যকে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য পত্নী মৈত্রেয়ীকে উপদেশ দিয়াছেন—

 “আত্মা বা অরে দ্রষ্টব্যঃ শ্রোতব্যো মন্তব্যে! নিদিধ্যাসিতব্যো মৈত্রেয়ী।” এখনে ব্রহ্মকে দর্শনেরই স্পষ্ট উপদেশ রহিয়াছে এবং তাহার জন্য শ্রবণমনন-নিদিধ্যাসনের আবশ্যক, ইহাও বলা হইয়াছে।

 মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য ব্রহ্মদর্শনের জন্য ‘নিদিধ্যাসন’ বলিয়াছেন, তাহারই অন্য নাম ধ্যান এবং তাহাকেই রবীন্দ্রনাথ বলিয়াছেন ধ্যানচক্ষু বা ধ্যানদৃষ্টি।

 প্রত্যেক উপনিষদেই উপদেশ রহিয়াছে যে, ব্রহ্ম কখনো ইন্দ্রিয়ের বিষয় হন না। আবার প্রত্যেক উপনিষদেই ব্রহ্মকে দর্শনের উপদেশ আছে দেখা যায়। কয়েকটি শ্রুতি উদ্ধৃত হইতেছে, যেখানে দেখা শব্দটিই উপনিষদের ঋষি প্রয়োগ করিয়াছেন। যথা—

 মুণ্ডকোপনিষদ বলেন, “যং পশ্যন্তি যতয়ঃ ক্ষীণদোষাঃ”—যাঁহাকে শুদ্ধচিত্ত সাধকগণ দর্শন করেন।

 “তং পশ্যতে নিষ্কল ধ্যায়মানঃ”—সেই ব্রহ্মকে ধ্যানিগণ দর্শন করেন।

 “তদ্বিজ্ঞানেন পরিপশ্যন্তি ধীরা আনন্দরূপমমৃতং যদ্বিভাতি”—আনন্দস্বরূপ অমৃতস্বরূপ প্রকাশমান ব্রহ্মকে ধীর ব্যক্তিগণ বিশেষ দৃষ্টিতে দর্শন করেন ইত্যাদি ॥

 শ্বেতাশ্বতরোপনিষদ বলেন “তে ধ্যানযোগানুগত্য অপশ্যন”—ঋষিগণ তাঁহাকে ধ্যানযোগে দর্শন করিয়াছিলেন।

 “তমাত্মস্থং পশ্যতি বীতশোক”—সেই ব্রহ্মকে দর্শন করিয়া বীতশোক হন।

 “তমাত্মস্থং যেহনুপশ্যন্তি ধীরাঃ ”—নিজের আত্মাতেই ধীরগণ তাঁহাকে দর্শন করেন ইত্যাদি ॥

 কঠোপনিষদ বলেন—

এষঃ সর্বেষু ভূতেষু গূঢ় আত্মা ন প্রকাশতে
 দৃশ্যতে ত্বগ্র্যয়া বুদ্ধ্যা সূক্ষ্ময়া সূক্ষ্মদর্শিভিঃ ।