পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৫২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
৪৮
ঋষি রবীন্দ্রনাথ

কখনো রূপকে উত্তীর্ণ হইয়া কোন পারের নাগাল মিলিবে না। চক্ষুর সাধ্য নাই রূপকে সাঁতরাইয়া পার হয়,—এ যেন অসীম অকূল পাথার। অন্যান্য ইন্দ্রিয় ও তাহাদের বিষয় সম্বন্ধেও এই একই কথা সমান প্রযোজ্য।

 দেখা গেল যে, ইন্দ্রিয়ের এদিকে অনন্তকাল অগ্রসর হইলেও ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ বলিয়া কোন কিছুরই নাগাল পাওয়া যাইবে না। রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শের জগৎ এমনই একটি ‘মহা-বৃত্ত’ যাহার পরিধি অসীম কালে এবং অসীম আকাশে বিস্তারিত। কাজেই, রবীন্দ্রনাথের কথিত ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ এই পরিধির দিকে নয়।

 আর, যদি রবীন্দ্রনাথ ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ বলিতে বস্তুত ইন্দ্রিয়ের সম্মুখে প্রকাশিত ও বিস্তারিত এই জগৎকেই বুঝাইয়া থাকেন, তবে ইন্দ্রিয়বান ব্যক্তিমাত্রেই ব্রহ্মজ্ঞ বলিয়া স্বীকৃত হইতে বাধ্য। কারণ, রূপ-রস-গন্ধ-স্পর্শের সে-জগৎ সকলেরই ইন্দ্রিয়-গোচর।

 তাহা ছাড়া, জগৎকে আমরা জগৎরূপেই দেখিতে পাই, সেখানে রবীন্দ্রনাথের ‘অণোরণীয়ান মহতো মহীয়ান’-কে আমরা কেহই দেখিতে পাই না। এইদিকেই যদি ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ হইত, তবে নিশ্চয় রবীন্দ্রনাথের ন্যায় আমরাও তাঁহাকে দেখিতে পাইতাম। কাজেই রবীন্দ্রনাথের কথিত ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ এই প্রকাশিত জগৎ-দৃশ্য হইতে পারে না।

 কিম্বা ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ বলিতে যদি রূপ-রস-গন্ধাদির আড়ালে কোন কিছু কে রবীন্দ্রনাথ বুঝাইয়া থাকেন, তবে সে কথার কোন অর্থ হয় না। চক্ষুর কথাই ধরা যাক,—চক্ষুর সম্মুখেই রূপের রূপান্তর ঘটিয়া থাকে। এই রূপ হইতে রূপে যাহা রূপান্তরিত হয় রূপের অন্তরের সেই ‘যাহাই’ যদি ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ বলিয়া রবীন্দ্রনাথ বুঝাইয়া থাকেন, তবে পূর্বের সমস্যাই দেখা দিবে। অর্থাৎ, চক্ষুরাদি ইন্দ্রিয়বর্গ প্রকাশিত অংশটুকুই দেখে, তাহার আড়ালে যদি কোন ‘পার’ থাকিয়াও থাকে, তাহা দেখে না।

 উপরন্তু এই ক্ষেত্রে ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ না বলিয়া ‘সৃষ্টির পারে’ বা ‘সৃষ্টির অতীত’ অথবা ‘সৃষ্টির অন্তরে’ ইত্যাদি প্রয়োগই সমধিক সত্য ও যথার্থ হইত। কিন্তু তাহাতে বড় জোর একটা ‘তত্ত্ব’ প্রকাশ পাইত, ‘সত্যদর্শন’ প্রকাশ পাইত না। কাজেই ‘ইন্দ্রিয়ের পার’ বলিতে সৃষ্টি বা জগতের দিকে রবীন্দ্রনাথ নিশ্চয় নির্দেশ করেন নাই, বুঝিতে হইবে।

 কিন্তু ইন্দ্রিয়ের একটামাত্র দিকই আমরা জানি, একথা পূর্বেই বলা হইয়াছে। ইন্দ্রিয়কে বলা যাইতে পারে—দ্রষ্টা এবং দৃশ্যের মাঝে সংযোগসেতু। সেতুর যে-মুখটা