পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
ঋষি রবীন্দ্রনাথ
৫৯

 এই সিদ্ধান্তের কোন সমর্থন উপনিষদে পাওয়া যায় কি না, ইহাই অতঃপর আমাদের দ্রষ্টব্য—

 উপনিষদে ব্রহ্ম সম্বন্ধে জ্যোতিশব্দের বহুল প্রয়োগ পরিদৃষ্ট হইয়া থাকে। অবশ্য ইহা ‘জ্যোতিষাং জ্যোতিঃ’—জ্যোতির জ্যোতি এবং সে-জ্যোতি কদাচ ইন্দ্রিয়গোচর বা ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নহে।

 বৃহদারণ্যক উপনিষদে মহর্ষি যাজ্ঞবল্ক্য ব্রহ্মকে বলিয়াছেন, “হৃদ্যন্তজ্যোতিঃ পুরুষঃ—হৃদয়ের অভ্যন্তরের জ্যোতিঃম্বরূপ পুরুষ॥” বৃহদারণ্যক ব্রহ্ম অথবা ব্রহ্মের প্রকাশরূপ সম্বন্ধে অন্যত্র বলিয়াছেন, “তস্য হৈতস্য পুরুষস্য রূপম্, যথা সকৃদ্বিদ্যুত্তম্—সেই পুরুষের রূপ কেমন? যেন বিদ্যুতের ভাতি॥”

 মুণ্ডক উপনিষদ ব্রহ্মকে বলেন, “অন্তঃশরীরে জ্যোতির্ময়োহি শুভ্রো হৃদয়াকাশে শুদ্ধ জ্যোতির্ময়॥”

 শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ ব্রহ্মকে বলিয়াছেন, “অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ রবিতুল্য-রূপ॥”

 “ছান্দোগ্য উপনিষদ বিদেহমুক্ত পুরুষের প্রসঙ্গে বলিয়াছেন, “পরং জ্যোতিরূপসম্পদ্য স্বেন রূপেন অভিনিষ্পদ্যতে- ব্রহ্ম পরম জ্যোতি, জীব মুক্ত অবস্থায় তাঁহাতে মিলিত হয়॥”

 সর্বশেষে কঠোপনিষদের একটি ব্রহ্ম-উপদেশ উদ্ধৃত হইতেছে, “অঙ্গুষ্ঠমাত্রঃ পুরুষো জ্যোতিরিবাধূমকঃ ঈশানো ভূতভব্যস্য— যিনি ত্রিকালের ঈশান (নিয়ন্তা), তিনিই নির্ধূমজ্যোতিসদৃশ অঙ্গুষ্ঠ পরিমাণ পুরুষরূপে ‘মধ্য আত্মনি তিষ্ঠতি’—শরীরের মধ্যে অবস্থিত॥”

 যে কয়টি শ্রুতি উদ্ধৃত হইল, তাহাতে উপনিষদের স্পষ্ট উপদেশ এই— —ব্রহ্ম পরমজ্যোতি এবং সেই পরমজ্যোতি এই দেহমধ্যেই রহিয়াছে। হয়তো অনেকের মনে প্রশ্ন উঠিতে পারে, ‘জ্যোতি’ বলিতে উপনিষদ কি বুঝাইতে চাহিয়াছেন? উপনিষদে ব্রহ্মের দুইটি রূপ দেখা যায়—চিৎ-রূপ এবং আনন্দরূপ। এই চিৎ-রূপই জ্যোতি। ভাষান্তরে চৈতন্যের পরিপূর্ণতা অথবা চৈতন্যের প্রকাশরূপই জ্যোতি। ব্রহ্ম রূপের অতীত, জ্যোতিই তাঁহার প্রকাশরূপ, ইহা গেল উপনিষদের প্রথম উপদেশ। দ্বিতীয় উপদেশ হইল—এই জ্যোতি দেহেই বিদ্যমান। আর তৃতীয় উপদেশ হইল,—এই জ্যোতিষাং জোতি ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য নহে, অতীন্দ্রিয়গ্রাহ্য।

 স্বভাবতই এবং সঙ্গতভাবেই আমরা এখন প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করিতে পারি, রবীন্দ্রনাথ দেহমধ্যে যে “অনির্বাণ দীপ্তিময়ী শিখা”-কে দেখিয়াছেন, তাহা এই