বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:ঋষি রবীন্দ্রনাথ - অমলেন্দু দাশগুপ্ত (১৯৫৪).pdf/৬৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

( ১২ )

 ‘দেহের যবনিকা’ বলিতে রবীন্দ্রনাথ দেহকেই যবনিকা বলিয়াছেন, এ বিষয়ে কোন মতবিরোধ থাকিতে পারে না। দেহকে যবনিকা বলার তখনই একটা অর্থ হয়, যদি দেহ বস্তুত কোন কিছুকে আবৃত বা অচ্ছাদিত বা আড়াল করিয়া রাখিয়া থাকে। দেহের মধ্যে যিনি বাস করেন, দেহ তাঁহাকেই আড়াল করিয়া রাখিতে পারে, কারণ দেহে দেহী ব্যতীত অপর দ্বিতীয় কিছু থাকিতে পারে না।

 উপনিষদ বলেন, এই দেহে যিনি দেহী, তিনিই আত্মা বা ব্রহ্ম। উপনিষদ আরও বলেন, দেহে থাকিয়াও দেহী স্বয়ং বিদেহী, দেহ তাঁহার ‘পুর’ বা ‘কোষ’ মাত্র। এই দেহপুরে যিনি দেহী, সেই আত্মাই দেহের যবনিকা সরাইলে উপনিষদের উপদিষ্ট ‘অঙ্গুষ্ঠমাত্র জ্যোতি’, ‘বিধুম পাবক’, ‘স্বয়ং জ্যোতি’ ইত্যাদি রূপেই লক্ষিত হন। রবীন্দ্রনাথের ‘অনির্বাণ দীপ্তিশিখা’ তাঁহারই নামান্তর মাত্র।

 রবীন্দ্রনাথ দেহকে ‘যবনিকা’ অর্থাৎ আবরণ বলিয়াছেন এবং এই আবরণেই আত্মা বা ব্রহ্মজ্যোতি আবৃত তিনি দেখিতে পাইয়াছেন। কাজেই দেহ সম্বন্ধে উপনিষদের উপদেশ কি, তাহা একটু জানা দরকার।

 উপনিষদে ব্রহ্মকে ‘গুহাহিতং’ বলিয়া বহুল উল্লেখ রহিয়াছে। অর্থাৎ এই দেহে ‘হৃদয়-গুহায়’ ব্রহ্ম অবস্থিত, ইহাই উপনিষদের উপদেশ। যথা,—

 ‘তং দুর্দর্শং গূঢ়মনুপ্রবিষ্টং গুহাহিতং (কঠ)—তিনি দুর্জ্ঞেয়, শরীরে অনুপ্রবিষ্ট, হৃদয়-গুহায় প্রতিষ্ঠিত।’

 —“ব্রহ্ম পরামৃতম্ নিহিতং গুহায়াম (মুণ্ডক)...এই পরম ও অমৃত ব্রহ্ম হৃদয়-গুহায় অবস্থিত।”