পাতা:ওয়ালেসের জীবনবৃত্ত - যোগেন্দ্রনাথ বিদ্যাভূষণ.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

৪২. ওয়ালেসের জীবনবৃত্ত। জনকেই পাঠাইলেন। কিন্তু সে নয় জনেরও কেহই ফিরিল না। তিনি একাকী সেই বিজন প্রদেশে বসিয়া ঘােরতর চিন্তায় নিমগ্ন হইলেন। একে ঘরা রজনী, তাহাতে সেই বিজনপ্রদেশে সেই প্রকাণ্ড অট্টালিকায় একাকী আসীন ; তাহার উপর বন্ধুগণের অদর্শনজনিত যাতনা—এই অবস্থার ওয়ালেসের মস্তিষ্ক দুর্বল হইয়া উঠিল, তাহার কল্পনা উন্মাদিনী হইল। তাহার বােধ হইল যেন তাহার শত্রুরা ঐ শৃঙ্গরব করিতেছে। তিনি অসি নিষ্কোষিত করিয়া শব্দের অভিমুখে ধাবিত হইলেন। দুর্গের দালান পরিত্যাগ করিয়া যাইবেন, এমন সময় তাহার বােধ হইল, যেন দালানের দ্বারে “ক” তদীয় মস্তক করে ধারণপূর্বক দণ্ডায়মান রহিয়াছে। তাহাকে দেখিতে পাইয়া যেন সে সেই মুণ্ড তদীয় চরণাভিমুখে প্রক্ষেপ করিল; কুড়াইয়া লইয়া যেন আবার প্রক্ষেপ করিল। তাহার রুধির ভয়ে ঘনীভূত হইল। তিনি নিশ্চয়ই স্থির করিলেন—ইহা “ফডনের” প্রেতযােনি—মানবী মূর্তি নহে। ভয়ে আকুল হইয়া তিনি তথা হইতে প্রস্থান করিতে কৃতসঙ্কল্প হইলেন। দ্বারে “ফডনের” প্রেমূর্তি দণ্ডায়মান, সুতরাং তিনি সে দিক্ দিয়া প্রস্থান করিতে সাহস না করিয়া একটী রুদ্ধ জানালার কপাট পদাঘাতে দ্বিখণ্ডিত করিয়া তথা হইতে এক লক্ষে দশ হস্ত নিম্নে পতিত হইয়া তাড়িত বেগে তথা হইতে অন্তর্ধান করিলেন। অদূরবর্তিনী নদী পার হইয়া ওয়ালে আপনাকে নিরাপদ মনে করিলেন। তখন তিনি সেই দুর্গের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করিলেন । তাহার বােধ হইল যেন দুর্গ জ্বলিতেছে ; তিনি “ফভনের প্রেতমর্ভিকেই ইহাৰ কারণ স্থির করিলেন। ফডনের প্রেতাত্মাই তাহার সঙ্গীদিগকে লইয়া গিয়া মারিয়াছে, তাহার মনে এই বিশ্বাস দৃঢ়-বন্ধ হইল। তৎকালে এরূপ ভৌতিক ভয় ও ভৗতিক বিশ্বাস প্রায় অনেকরই ছিল। ওয়ালে এই ভৌতিক উৎপাতে ভীত ও বিষয় হইলেন। তিনি নদীতীরে বেড়াইয়া বেড়াইয়া অতি কাতর ভাবে ভগবানের আরাধনা করিতে লাগিলেন ; উম্মতের ন্যায় কঁদিতে কাদিতে ভগবানের নিকট তাহার অভিপ্রায় জিজ্ঞাসা করিলেন।